আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বলছি, এত রক্ত দেয়ার পরেও যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিবে, তাদের সাথে বাংলাদেশের মানুষের কোন সম্পর্ক নেই, থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ সেই দিল্লির এজেন্ডা আর এই দেশে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। দিল্লিতে বসে বসে পরিকল্পনা করা হবে, আর বাংলায় বসে বসে তার দাসের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে, সেই স্বপ্ন ৫ই আগস্টের পর আর দেখা যাবে না। সেই স্বপ্ন আর দেখবেন না।
বাংলার সেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে দেখুন। বাংলার সেই প্রতিটি সীমান্তে দেখুন। সীমান্তের মানুষজন এখন প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সুতরাং দিল্লির পক্ষে এদেশে অবস্থান করবেন, এদেশে রাজনীতি করবেন, সেটা এদেশের মানুষ আর মেনে নিবে না, নিবে না, নিবে না। আজকে অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পরে, যখন দিল্লির স্বরাষ্ট্র, দিল্লির পররাষ্ট্র সচিব বলছে, আগামী বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সাথে, সরকার আসলে আমরা সম্পর্ক স্বাভাবিক করব। তার দুইদিন পরেই দেখা যাচ্ছে, একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বলছে, অতি দ্রুত নির্বাচন দেন, নির্বাচিত সরকারই এই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
আমরা দেখছি, হঠাৎ করে এসে বলা হচ্ছে, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে তাদের কাছে নিরপেক্ষ সরকার মনে হচ্ছে না। তারা নতুন নিরপেক্ষ সরকার চাই। যেই সরকার ১/১১তে যেরকম ভাবে কারচুপির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশকে তাদের দাসত্বের, ভারতের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল, সেই রকম একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে যেন, এমন একটি সরকার দেয়া হয় নিরপেক্ষ সরকারের নামে, যেটা তাদেরকে নিশ্চিত ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে, সেই রকম সরকার তারা চায়।
তাদের সেই কথার দুইদিন পরে আমরা দেখছি, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলছে, সেও একটি নিরপেক্ষ সরকার চাই। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার নিরপেক্ষ নয়। আমরা দেখছি, আপনাদের ভাষার সাথে আওয়ামী লীগের ভাষা মিলে যাচ্ছে। আপনাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সাথে, দিল্লির দাসত্বদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে মিলে যাচ্ছে।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে, রাজপথে নেমে এসেছিল। আপনাদের নেতৃত্ব যদি এদেশের মানুষ, আপনাদের নেতৃত্বের উপর যদি ভরসা রাখতো, তাহলে সেই ২৮শে অক্টোবর শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালাতো।
আপনারা সেদিন পল্টন ময়দানের, সেই লক্ষ লক্ষ লক্ষ মানুষদেরকে টিয়ার গ্যাসের সামনে ফেলে মঞ্চ থেকে পালিয়েছেন। এই দেশের মানুষ ভুলে যাইনি। কিন্তু নাহিদ ইসলামেরা, আসিফ মাহমুদরা, এই দেশ থেকে পালায় নাই। তারা ৩ আগস্ট, ৪ আগস্ট, ৫ই আগস্ট প্রতিটি দিন রাজপথে ছিল। তারা ডিবির অফিস থেকে এসে এক ঘন্টার জন্য রেস্ট নেয় নাই। তারা তারপর দিন থেকে রাজপথে নেমেছিল। আজকে আপনারা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদের চাইতে নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক মনে করছেন।
৫ই আগস্টের পরে, আপনাদের নেতাকর্মীরা পথে ঘাটে, যেই লেভেলের চাঁদাবাজি শুরু করেছে, দখলদারিত্ব শুরু করেছে। এই কারওয়ান বাজারের প্রতিটি সবজি দোকান থেকে তারা চাঁদাবাজি করছে, এখানকার প্রতিটি রিক্সাওয়ালার থেকে তারা চাঁদাবাজি করছে।
যেই চাঁদাবাজি আওয়ামী লীগ করতো, যেই চাঁদাবাজি ছাত্রলীগ করতো, যেই চাঁদাবাজি যুবলীগ করতো, এখন আপনারা সেই চাঁদাবাজির হাত হস্তান্তর করে নিজেদের হাতে নিয়েছেন।
কিন্তু মনে রাখবেন, শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্যে, ভোটের জন্যে, এদেশের মানুষ, এদেশের ২০০০ ছাত্র-জনতা জীবন দেয় নাই। এদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য জীবন দেয় নাই। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে নাই। তারা প্রতিটি চাদাবাজের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছে। তারা প্রতিটি দখলদারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
সুতরাং, আজকে এই চাদাঁবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ না করলে, আপনারা অপেক্ষা করুন। মনে করবেন না, ৫ই আগস্টের যেই কোটি জনতা এই দেশের রাজপথে, রাস্তায় এনে এসে ছিল, তারা ঘরে ফিরে গিয়েছে। তারা অপেক্ষা করছে, আরেকবার চাদাঁবাজ, দখলদারদের বিরুদ্ধে নাহিদ ইসলাম এসে আহ্বান করবে, সেই নাহিদ ইসলামের আহ্বানে এসে, প্রতিটি চাদাঁবাজ-দখলদারদেরকে, প্রতিটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে আবার উৎখাত করা হবে।
Leave a Reply