চীনকে টেক্কা দিতে ভারতের নতুন বাঁধ, পানির কারণে মরুভূমি হবে বাংলাদেশ!

পৃথিবীর গতি কমিয়ে দেওয়া চীনের থ্রি গর্জিয়াস ড্যাম-এর চাইতেও বৃহত্তর আকারে বাঁধ নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে চীনে। তিব্বতের ইয়ারলু সাংপো (Yarlung Tsangpo) নদীর ওপর নির্মিত হবে বিশ্বের বৃহত্তম এই বাঁধ। এর পাল্টা জবাবে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং (Siyang) নদীতে বিশাল এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।

হিমালয়ের স্পর্শকাতর অঞ্চলে আন্তঃসীমান্ত নদীতে পানি আটকে বিশাল আকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে বদলে যাবে ভাটি অঞ্চলের পানির প্রবাহ। দুই দেশের প্রতিযোগিতার ফলস্বরূপ এই প্রকল্পের প্রভাব বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ লাখ লাখ মানুষের জীবনে হতে পারে মারাত্মক। বিশেষ করে, প্রতিবেশী দেশগুলোর পানির দখল নিয়ে চলমান এই যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ খরা ও বন্যার নতুন তাণ্ডবের মুখোমুখি হতে পারে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ইয়ারলু সাংপো নদী, যেটি কৈলাস পর্বতের কাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, তিব্বতে পরিচিত হলেও ভারতের অরুণাচলে প্রবাহিত হয়ে এটি সিয়াং নামে পরিচিত। ভারতের বেশিরভাগ অংশে এটি ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রায় ৮% সুবিধা পায় বাংলাদেশ, কিন্তু এই নদী দেশের ৬৫% পানির যোগান দেয়। ফলে, পানি নিয়ে ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।

এভাবে, সিয়াং এবং ইয়ারলু সাংপো নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে খরা কিংবা উপচে পড়া বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে। ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখা নদীগুলোর অসংখ্য জনপদ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

চীনের নির্মাণাধীন এই মেগাডামটি থ্রি গর্জিয়াস ড্যাম-এর চেয়েও বিশাল হবে এবং এর জন্য খরচ হবে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। তবে, এই প্রকল্পের ফলে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে এবং কতগুলো জনপদ প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে, ভারতের অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং নদীতে ‘সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট’ নামে এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১৩২ বিলিয়ন ডলার খরচে তৈরি হতে যাওয়া এই বাঁধ ৯ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি ধারণ করতে সক্ষম হবে। তবে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে সিয়াং নদীর উপকূলবর্তী স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ধারণা, এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে অন্তত ২০টি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ডুবে যাবে এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বসতভিটা হারাবে।

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে আট মাত্রার বেশি ভূমিকম্পের অধিকাংশের উৎপত্তি হিমালয় অঞ্চলে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চীনের তিব্বতে ৭.১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে সেখানে ১৪টি হাইড্রো বাঁধের মধ্যে অন্তত পাঁচটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, হিমালয়ের বিপদজনক পরিবেশে দুটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করলে ভূমিকম্প বা বন্যার সময় ভয়ংকর বিপর্যয়ে পড়তে পারে ব্রহ্মপুত্রের পানির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ ও গোটা ভাটি অঞ্চল।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=Dfb4EX8hCoY

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *