বিশিষ্টি আলোচক ড.জাহিদ আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) তাঁর ব্যাক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে ভারতের আজতাক মিডিয়ার দাবি করা, গতকালের আলোচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক,নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও জুনায়েদ আহমেদ পলককে নিয়ে মুখ খুলেছেন।
ড. জাহিদ তাঁর ভিডিওতে বলেন, শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের হিস্টিরিয়া আমরা দেখছি। ভারতের সরকার তো বটেই, তার মিডিয়া। সত্যি বলতে ভারতের সরকার এবং মিডিয়াকে এখন আর আলাদা করার কিছু নেই। ভারতের মিডিয়াগুলো বহুদিন থেকেই বেশ কয়েক বছর থেকেই ভারতীয় গদি মিডিয়া বলে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ যারা নরেন্দ্র মোদির কোলে বসা।মিডিয়া তাদের মিডিয়াকে একটু পাত্তা না দিলেও একটু মাঝে মাঝে ফলো করা দরকার। আমরা বুঝতে পারি যে তারা আসলে বাংলাদেশ সম্পর্কে কি ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছে। এটা কমবেশি ভারতের ইস্টাবলিশমেন্ট, ন্যারেটিভ সরকার কেউ না কেউ এ ধরনের একটা ন্যারেটিভ বাজারে ছাড়তে চাইছে।
সত্য হোক, মিথ্যা হোক, তাদের উদ্দেশ্যটা আমরা বুঝতে পারি। আজতাক নামে একটা বাংলা চ্যানেল আছে ভারতীয়, যেখানে তারা এক অভিনব দাবি করেছে। তারা সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নাম উল্লেখ করে বলেছেন যে, এই মানুষগুলো শেখ হাসিনার পতনের সাথে জড়িত ছিল। একটা রিপোর্ট এবং এর মধ্যে কাজের কথা খুব বেশি নেই। ইনিয়ে বিনিয়ে এটাকে লম্বা করা হয়েছে এবং কিছু বিশেষজ্ঞকে এখানে আনা হয়েছে। তারা মিলে কথা বলছেন।
সেখানে তিনজন ব্যক্তি আছেন জনাব আনিসুল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী, সাদ্দাম হুসাইন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট এবং জনাব জুনায়েদ আহমেদ পলক, যিনি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এই তিনজন নাকি বাংলাদেশের ঐ সময়কার মুভমেন্টের সময় যারা এসব মুভমেন্টে জড়িত ছিলেন তাদের সাথে যোগাযোগে ছিলেন এবং তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।
তাদের কথার ভিত্তিটা এই রকম যে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা সামহাউ তাদেরকে ট্র্যাক করেছে, তাদের কথপোকথন রেকর্ড করেছে। সেটা সরকারের কাছেও নাকি দিয়েছিল। পরে এটা ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে যায়। সেখান থেকে আজ তাকের হাতে এসেছে এবং ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য যেটা উচিত হতো তাদের যে কিছু কিছু অংশ একটু পড়ে শোনানো যে কার সাথে কী ধরনের কথাবার্তা হয়েছে। আর এ রকম কিছু আমরা আসলে ঐ রিপোর্টে দেখি না। রাদার তিনটা নাম আমাদের সামনে আনা হলো এবং সকল যে বিশেষজ্ঞ আছেন তিনিও আবার নানান রকম কন্সপিরেসি আবিস্কার করছেন। যেমন স্বাভাবিক ভাবেই একটা প্রশ্ন আসবে যে এর মধ্যে অন্তত দু’জন তো গ্রেফতারকৃত আছেন যারা আনিসুল হক এবং পলক দুজনই কাস্টডিতে আছেন। তারা কেন কাস্টডিতে আছেন? তারা যদি সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ করে থাকেন এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষেই থেকে থাকেন, চেষ্টা করছেন এটাও একটা কৌশলের অংশ। অথচ আমরা এই মানুষগুলোর প্রতি কোনো রকম কোনো সন্দেহ না রাখি।
তিনি আরো বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি আমরা বিশ্বাস করি? উত্তর হচ্ছে, না, একেবারেই না। কিন্তু এই কথাগুলো বলা হবে। বলা হচ্ছে, আরও কাউকে কাউকে এই সামনে আনার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু কেন করছে তারা?
যে শুরুতেই বলেছিলাম যে আসলে আমাদের একটু শোনার দরকার। একটু বোঝার দরকার যে তাঁরা আসলে কী করতে চায়। তাদের ন্যারেটিভটা কী? তারা কী উদ্দেশ্য সফল করতে চায়? আমাদের কাছে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ভারতের দিক থেকে ভারত মানে কিন্তু ভারত না। ভারত মানে আওয়ামী লীগসহ একসাথে কিছু একটা। আওয়ামী লীগ কিছু মানুষকে তার শত্রু হিসেবে আমাদের সামনে ইস্টাবলিশ করতে পারে। তাহলে যেটা দাঁড়াবে সেটা হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের আমরা যারা শেখ হাসিনা বিরোধী ছিলাম তাদের একটা ইন্টারঅ্যাকশনের স্কোপ তৈরি হয়। আনিসুল হক আওয়ামী লীগ এখন তাকে শত্রু জ্ঞান করছে এবং খুব সম্ভাবনা আছে যে, আনিসুল হক বা পলক যারা এই মুহূর্তে আমাদের হাতের মধ্যেই আছে, তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিষাদগার করার চেষ্টা হতে পারে যে, এই লোকগুলো তাহলে আমাদেরকে ডুবিয়েছে।
আমরা এই করব। আমাদের মনে হবে আনিসুল হক এবং পলক তো আসলে আওয়ামী লীগের সাথে না চেয়ে আমাদেরই পক্ষের লোক ছিল এবং তার সাথে এই মানুষগুলোর প্রতি আমাদের একধরনের সফট কর্নার তৈরি হওয়ার প্রবাবিলিটি তৈরি হবে। তারা ভাবছেন হবে কিনা সেটা রিসেন্ট আলোচনা। ঠিক একইভাবে আমি ধারণা করি, এরপর আরও বেশ কিছু মানুষকে এভাবে ভিলেইন হিসেবে আমাদের সামনে আনার চেষ্টা হবে গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে। অন্য কোন না কোন ফর্মে। এটার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যাতে তারা আমাদের প্রতি ক্ষোভ বিক্ষোভ কমে আসে এবং তারা আস্তে আস্তে অপারেট করতে পারেন। যেহেতু এই দুজন মাঠে আছেন, এই দুজন যদি এরকম হয় যে তারা অভিযুক্ত। আস্তে আস্তে তারা জামিন পেলেন। তারা বেরিয়ে আসলেন তারা বেরিয়ে এসে আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করলেন।কাজ করবেন এই ধরনের কোন উদ্দেশ্য একই সাথে সাদ্দামকে ও তারা যদি এইরকম করে আস্তে আস্তে পাঠায়।
এরকম একটা উদ্দেশ্য তাদের আছে। আমাদেরকে বোকা বানানোর জন্য তারা এই চেষ্টা করছেন। ঐ যে বললাম যেহেতু এটা হচ্ছেই, এরকম আরও অনেকেই, আরো অনেক নাম আমাদের সামনে আসলে আসবে।
আসলে আমরা তত বোকা নই। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি যা যা বলতেন, যা যা করতেন সব কিছুকে ইয়েস ইয়েস বলতেন। যেসব চাটুকার তাদেরকে দেখে উনি মনে করতেন উনি অনেক বুদ্ধিমান। তিনি যা বলেন, যা করেন সব সঠিক করেন এবং তিনি মানুষের কাছে যা করতে চাচ্ছেন বলে মানুষের সামনে ইমেজ তৈরি করতে চেষ্টা করছেন সেটা হচ্ছে এটা আসলে হচ্ছিল না।
আমরা তার এই ফালতু মিথ্যাকে গ্রহণ করিনি তখনও। কিন্তু ওই যে তার আশপাশে মানুষগুলো ছিল, তারা মনে করেছিল এটার মাধ্যমে বলেছেন আপা, এটা তো অসাধারণ হয়েছে। মানুষ তো সেই গ্রহণ করেছে, খেয়েছে এসব।
এসব তো বলেন পাশে থেকে থেকে কিন্তু হয় না। আসলে কিন্তু যেটা হয়, দীর্ঘদিন এই ধরনের একটা ইকো চেম্বারের মধ্যে বাস করতে করতে শেখ হাসিনা তার নিজেকেই অসীম ক্ষমতাধর মনে করেছিলেন। তাদের এই চেষ্টাগুলো আদতে কোন রকম কোন ফল আসলে বয়ে আনবে না। আমরা যথেষ্ট বেশি স্মার্ট এবং এটা আসলে শেখ হাসিনারও বোঝা উচিত।
কারণ শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন, তার পুরোটা তার, সেটা তিনি দেশের জন্য জীবন দিচ্ছেন। তাহাজ্জুতের পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তিনি দেশের কথা ভাবতে থাকেন। তিনি সকল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করছেন। তিনি উন্নয়ন করছেন কিন্তু মানুষ সেগুলো খায় নাই। তার প্রমাণ হচ্ছে আপনাকে জেনে শুনে এরপর রাতে ভোট করতে হয়েছিল।
এনএসআই রিপোর্টের কথা পত্রিকায় দেখেছে যে বাইশটা সিট পাবে বলে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল। আঠারোতে সর্বোচ্চ বাইশটা সিট। তাহলে খায় না। আমরা খাইনি। আমরা অনেক আগে থেকেই যথেষ্ট স্মার্ট। মানে কেউ কেউ বলেন যে আমাদের ভোটের ক্ষেত্রে আমাদের জনগণ আসলে যথেষ্ট পরিমাণ ম্যাচিউরড কিনা, স্মার্ট কিনা, শিক্ষিত কিনা তার প্রতিনিধি নির্বাচন করার জন্য। আমি তো দেখি আসলে আমাদের দেশের মানুষ খুব চমৎকারভাবে সে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় নাই।
যতকিছুই করুক না কেন, আঠারোর মত যদি টাকা দিয়ে সয়লাব করে ফেলতো মানুষকে ও মানুষ কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিত। সুতরাং এই যে চেষ্টা এখন হচ্ছে একে তাকে ভিলেনের ভাব দেখিয়ে আস্তে আস্তে মাঠে দেয়ার। এটা কাজ করবে না। আমরা এগুলো যথেষ্ট বেশি বুঝি। কিন্তু ঐ যে প্রায়ই বলি যে, আওয়ামী লীগের হয়ে যখন ভারতীয় মিডিয়া বা আওয়ামী লীগ যখন এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, যেটাকে খড়কুটো ধরার চেষ্টা বলে মনে হয়, সেটা দেখতে ভাল লাগে।
আমাদের প্রবচনে আপনি ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো ধরে বাঁচতে ধরতে দেখা আর যখন চেষ্টা তখন বোঝা যায় এরা ডুবন্ত না ডুবন্ত না। আওয়ামী লীগ ডুবে গেছে এবং সেটার প্রমাণ একটার পর একটা ভারতীয় মিডিয়া দিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের অন্যরা দিয়ে যাক। আমরা সুখী হই। এগুলো দেখে এই দিনগুলো দেখতে পারব। অনেকের কাছে মনে হয় নাই দেখা যাচ্ছে এর চেয়ে সুখকর কোন দৃশ্য হতে পারে না।
Leave a Reply