ব্যাংকে সঞ্চয় করবেন, জেনেনিন মুনাফার হার!

নতুন বছরের শুরুতে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেকেই আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করতে চান। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কোন ব্যাংকে সঞ্চয় করলে বেশি মুনাফা বা সুদ পাওয়া যাবে এবং জমানো টাকার নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করা যাবে।

সঞ্চয়ের জন্য কেন ব্যাংক?

সহজলভ্যতা এবং নিরাপত্তার কারণে বেশিরভাগ মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখাকেই সঞ্চয়ের উত্তম মাধ্যম মনে করেন। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্প ও স্থায়ী আমানতের (Fixed Deposit) ওপর সুদ বা মুনাফা দিয়ে থাকে। তবে ব্যাংকভেদে এই সুবিধার পার্থক্য রয়েছে।

ডিপিএস: মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প

প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখার পরিকল্পনাকে ডিপিএস বা ডিপোজিট পেনশন স্কিম বলা হয়। এটি বিভিন্ন ব্যাংকে ভিন্ন নামে প্রচলিত। এই প্রকল্পে ব্যাংকগুলো মাসিক, ত্রৈমাসিক, ছয় মাসিক বা বাৎসরিক সুদের সুবিধা প্রদান করে।

এফডিআর: স্থায়ী আমানতে সুদের হার

ব্যাংকগুলো সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে তিন বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী আমানতের (Fixed Deposit) সুযোগ দেয়। এ ধরনের আমানতে সুদের হার বিভিন্ন ব্যাংকে ৩ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মুনাফার হার

দেশে মোট ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংক সর্বোচ্চ সুদ প্রদান করছে। তিন থেকে ছয় মাসের জন্য ৭ থেকে ৯.২৫ শতাংশ, এক থেকে তিন বছরের জন্য ৭.৫০ থেকে ৯.৫০ শতাংশ এবং তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য ১০.৬৭ শতাংশ সুদ প্রদান করছে।

অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, যেমন সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা ব্যাংক ৬.৩২ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।

বেসরকারি ব্যাংকের মুনাফার হার

বেসরকারি ব্যাংকগুলো সাধারণ সঞ্চয়ে ২ থেকে ৮ শতাংশ এবং মেয়াদি আমানতে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এনআরবি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ১৩.৪৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এ ছাড়া এবি ব্যাংক, এসএবিসি ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকও ১২ শতাংশ বা তার বেশি সুদ দিচ্ছে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের মুনাফার হার

ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ৯ থেকে ১১.৫০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংক ১১.৫০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা ঘোষণা করেছে।

বিদেশি ব্যাংকের সুদের হার

বিদেশি ব্যাংকগুলো সাধারণত সুদের হার কম দিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন তিন বছরের জন্য ১১.৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৬ থেকে ৯ শতাংশ এবং হাবিব ব্যাংক ৭ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। তবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এইচএসবিসি ব্যাংকের সুদের হার ২ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে করণীয়

সুদের হার বেশি দেখে ব্যাংকে আমানত রাখা উচিত নয়। সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংক নির্বাচন করার আগে দেখতে হবে তাদের আর্থিক অবস্থা, করপোরেট সুশাসন এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ। একটি শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি।

উপসংহারসঞ্চয় করার জন্য ব্যাংক একটি নিরাপদ মাধ্যম। তবে সঠিক ব্যাংক বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুদ বা মুনাফার হার বেশি হলেও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই আমানত রাখার আগে ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *