সন্তানকে কখনোই যেসব কথা বলা উচিত নয়!

শিশুর কোমল হৃদয়ের অনুভূতিকে আহত করতে পারে অথবা এমন কোনো অতি প্রশংসনীয় বাক্য যা তাকে অহংকারী করে তুলতে পারে তা কখনোই বলা উচিৎ না

সন্তানের আচরণের ধরণ অনেকাংশেই নির্ভর করে বাবা-মায়ের আচরণের ওপর। শৈশবে শিশুর সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়, ঠিক তেমন মানসিকতা নিয়েই সে বেড়ে ওঠে। আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান পালনের দায়িত্বগুলো মায়েদেরই পালন করতে হয়। তবে বাবার আচরণও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। তাছাড়া, কিছু প্রকৃতিগত আচরণ বংশগত কারণেই পেয়ে থাকে শিশুরা।

প্রতিটি শিশুরই প্রয়োজন যত্ন। তবে তার কোমল হৃদয়ের অনুভূতিকে আহত করতে পারে অথবা এমন কোনো অতি প্রশংসনীয় বাক্য যা তাকে অহংকারী করে তুলতে পারে তা কখনোই বলা উচিৎ না।

জেনে নেওয়া যাক সেই কথাগুলো সম্পর্কে-

এভাবে নয়, এভাবে করো: নতুন কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুরা একাধিকবার ব্যর্থ হবেই। কিন্তু আপনি যদি শুরু থেকেই তাদের ব্যর্থতার মধ্যে বারবার নিজের নির্দেশনা দিতে থাকেন, তাহলে তাদের অনুভূতি হবে তারা কাজটিতে কোনোভাবেই সক্ষম হবে না।

দিনে দিনে বোকা হচ্ছো: হতে পারে আপনার সন্তান কাউকে সালাম বা শুভেচ্ছা জানায়নি, কিন্তু তাই বলে তাকে সামনাসামনি ‘‘দিনে দিনে বোকা হচ্ছ’’ বলে বকা দিলে তা শিশুকে বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলবে, কারণ এটা তার জন্য একটা নতুন পরিস্থিতি। বকাঝকা না করে তাকে পরিস্থিতি বুঝতে সহায়তা করুন।

তুমি খুব লাজুক: সাময়িক কোনো কিছুর ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিত্বের লেভেল বলাটা সমীচীন নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বভাবগতভাবে শিশু লাজুক প্রকৃতির হোক বা না হোক, এমন ধরনের কথাবার্তা বলা হলে তা শিশুর জন্য খুবই অস্বস্তিকর। বিষয়টি তার অনুভূতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

কান্নার মতো কিছু হয়নি: শিশুরা অনেক সময়ই মন খারাপ বা তুচ্ছ কারণে কান্নাকাটি করে। আপাতদৃষ্টিতে তার কান্নাকাটির কোনো কারণ নেই বলে মনে হলেও, কান্না থামাতে জোর করলে শিশুরা বিব্রত হয়। কান্নাকাটির সময় শিশুরা ধমক নয় বরং সহানুভূতি প্রত্যাশা করে।

বড় ছেলেরা কাঁদে নাকি: কিশোর বয়সে পা দেওয়ার আগের ছেলে শিশুদের প্রায় বলা হয়ে থাকে, ‘‘বড় ছেলেরা (অথবা মেয়ে) কাঁদে নাকি?’’ বিষয়টি কিন্তু কঠোর পন্থায় তাদের আবেগ দমনের নির্দেশনা। এভাবে বললে তাদের মনে হতে পারে, বড় হয়ে গেলে আবেগের কোনো মূল্য নেই, তারা আবেগ-অনূভুতি শুন্য।

দেখ তুমি কত সুন্দর: “তুমি খুবই সুন্দর, দেখ তুমি কত সুন্দর”, এই ধরনের বাক্য শোনার মাধ্যমে মেয়ে শিশুরা ছোট বয়স থেকেই ভাবতে শেখে পৃথিবী তাদের কাছ থেকে কেমন থাকাটা আশা করে। ফলে তারা কেবলমাত্র নিজেদের সৌন্দর্যের প্রতি বেশি নজর দেওয়া শুরু করে।

অন্যের সঙ্গে তুলনা: বাবা-মায়ের সবচেয়ে সাধারণ ভুল হলো, ‘‘তুলনা করা’’। আমরা আমাদের সন্তানকে সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করে থাকি। ‘‘দেখো, ও কতো নম্বর পেয়েছে আর তুমি কতো পেয়েছো’’; ‘‘ওর আচরণ কতো ভালো আর তোমার আচরণ মোটেও ভালো না’’। এসব তুলনামূলক বাক্য সন্তানের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি করে। সে সবাইকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে।

বড়দের কথা সবসময় শুনতে হয়: প্রায়ই বাচ্চাদের এমন কথা বলা হয়। আসলে বিষয়টি অনুচিত। শিশুকে এমন বার্তা দিলে তারা অনেক সময় না বুঝেই অপরিচিত কোনো মানুষের কথাও মেনে নিতে পারে, যা তার জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে।

কর্তৃত্ব খাটানো: আমরা অনেক সময় সন্তানের ওপর অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠি। তার সমস্ত কিছুর সিদ্ধান্ত বাবা-মা নিয়ে থাকেন। তার মতামতের কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। তাকে বাধ্য করা হয় আমাদের সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিতে। আমরা ভাবি, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আসলে এই ধারণাটি ভুল। কোনো বিষয়ে শিশুর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

তুমি খুব স্মার্ট: “তুমি খুব স্মার্ট”- এ জাতীয় প্রশংসা শিশুকে কোনো কিছু করতে উৎসাহিত করে না বরং নতুন কিছু শেখা থেকে বিরত রাখে। কারণ তারা মনে করে আমি খুব স্মার্ট এবং সবই জানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *