আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে সাবিনা ইয়াসমিন!

আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। শনিবার ভোরে তাকে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে তাকে এইচডিইউতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে কিছুক্ষণ থেকে সুস্থ হয়ে রাতেই বাসায় ফিরেছিলেন উনি। কিন্তু ভোর রাতের দিকে মাথা ঘুরে ওয়াশরুমে পড়ে যান। তারপরে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে গান গাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিনা ইয়াসমিন। তখন তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে রাতে ফিরলেও ভোর রাতে অসুস্থ হয়ে গেলে আবারও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

দীর্ঘ এক বছর পর শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমীন: আমি আছি থাকব’ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিনা ইয়াসমীন। বর্তমানে তিনি হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

আগের চেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে এইচডিইউতে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানান দীঠি আনোয়ার।

তিনি বলেন, সাবিনা ইয়াসমিনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকালে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন নেয়া হয়। তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বিকেলে হাসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

দিঠি আনোয়ার বলেন, যেহেতু পরপর দুইদিন একই সমস্যা হয়েছে, তাই দুপুর থেকে উনাকে এইচডিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। উনার তো ডায়াবেটিস আছে, ব্লাড প্রেসার আছে, ভারটিগো আছে। তাই সমস্ত কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে ডাক্তার জানিয়েছেন তিনি সুস্থ আছেন।

২০২৩ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে একাধিক স্টেজ শো করেন সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর আর তাকে মঞ্চে দেখা যায়নি।

সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।

সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের।

ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি।

সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি।

দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *