এশিয়ায় নতুন যুদ্ধ?

রাত গভীর হতে না হতেই জাপানের রাডারে ধরা পড়ে এক অস্বাভাবিক সংকেত—আকাশে ছুটে চলেছে এক অজানা বোমারু বিমান। মুহূর্তের মধ্যেই যুদ্ধবিমান প্রস্তুত। টোকিও থেকে আসে চূড়ান্ত নির্দেশ।

সাগর আর আকাশের সীমানায় চলছে এক নীরব শক্তি প্রদর্শন। রাশিয়ার দীর্ঘ পাল্লার বোমারু বিমান উড়ছে আন্তর্জাতিক জলসীমার উপর দিয়ে, আর তাদের পিছনে জাপানের এয়ার ডিফেন্স ফোর্স (ASDF) যুদ্ধবিমান।

জাপানের প্রধান মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে দুটি তুপোলেভ-৯৫ বোমারু বিমান এবং যুদ্ধবিমান সাগর অব ওখোটস্ক ও জাপান সাগরের ওপর দিয়ে উড্ডয়ন করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জাপান তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য।

তবে রাশিয়া এটিকে সামরিক অনুশীলন বলেই ব্যাখ্যা করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমাদের সমস্ত ফ্লাইট আন্তর্জাতিক আইন মেনে পরিচালিত হচ্ছে এবং কোনো দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা হয়নি।” এমনকি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় তাদের দুটি তুপোলেভ-৯৫ বিমান ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক জলসীমার ওপর উড্ডয়ন করছে। সঙ্গে রয়েছে রুশ ফাইটার জেট।

এমন ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার একটি ফাইটার জেট জাপানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল বলে অভিযোগ তোলে টোকিও, যা মস্কো অস্বীকার করেছিল। তখনও একইভাবে জাপান যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল। টোকিও এই বিষয়টি মস্কোর কাছে বারবার কূটনৈতিকভাবে উত্থাপন করেছে। কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি, বরং রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমাগত বাড়ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার সামরিক এই প্রদর্শন জাপানের জন্য সরাসরি হুমকি নয়, বরং এটি একটি শক্তি প্রদর্শনের কৌশল (Power Projection)। যা মূলত মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তিগুলোর উদ্দেশ্যে ইঙ্গিত করছে। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়া এখন পূর্ব এশিয়ায় সামরিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে।

জাপান যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ওয়াশিংটনের সঙ্গে জাপানের সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে, যা রাশিয়ার জন্য অস্বস্তিকর।

অনেক সামরিক বিশ্লেষকের মতে, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে। রাশিয়ার সামরিক বিমান মহড়া চীনের জন্যও একটি বার্তা বহন করছে।

রাশিয়ার এই কৌশলগত উড্ডয়ন এক ধরনের সামরিক বার্তা। ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন-রাশিয়া সম্পর্ক এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাপানও যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে চায়—শুধু যুদ্ধবিমান ক্রাম্বল করাই নয়, সামরিক বাজেটও বৃদ্ধি করছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *