free tracking

জমি কেনার আগে যেভাবে কাগজপত্র যাচাই করবেন!

জমি কেনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। সামান্য অসতর্কতা ভবিষ্যতে বড় ধরনের জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই জমি কেনার আগে কীভাবে সঠিকভাবে কাগজপত্র যাচাই করবেন, সে বিষয়ে জেনে নিন ধাপে ধাপে।

১. জমির তফসিল যাচাই:
জমি কেনার প্রথম ধাপ হলো জমির তফসিল পরীক্ষা করা। জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর এবং জমির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এই তথ্য জমির সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করে এবং পরবর্তী যাচাই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

২. জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ:
বিক্রেতার কাছ থেকে জমির সি.এস., এস.এ., আর.এস., এবং বি.এস. খতিয়ান, নামজারী খতিয়ান, খাজনার দাখিলা এবং জমির বায়া দলিলসহ (চেইন অব টাইটেল) সকল কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হবে।

৩. বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত করুন:
বিক্রেতা সত্যিই জমির মালিক কিনা, তা যাচাই করা জরুরি। যদি ক্রয়সূত্রে মালিক হন, তাহলে তার ক্রয় দলিল রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হলে জরিপের খতিয়ান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে হবে।

৪. ফরায়েজ বা বণ্টননামা যাচাই:
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে বিক্রেতার অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে জমি ভাগাভাগির ফরায়েজ বা বণ্টননামা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। রেজিস্ট্রেশন না করা হলে শুধুমাত্র বিক্রেতার অংশটুকু কেনার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. মামলা ও দায়বদ্ধতা পরীক্ষা:
জমি নিয়ে কোনো মামলা বিচারাধীন রয়েছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। জমি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে কিনা, তাও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

৬. জমির প্রকৃতি যাচাই:
জমিটি খাস জমি, শত্রু সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, বা সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত কিনা তা উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা থেকে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

৭. বিক্রেতার যোগ্যতা পরীক্ষা:
জমির মালিক নাবালক, অপ্রকৃতিস্থ বা আইনগতভাবে বিক্রয়ের অযোগ্য কিনা তা যাচাই করা আবশ্যক। যদি জমির মালিক নাবালক হন, তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া জমি কেনা যাবে না।

৮. নামজারি ও খাজনা রসিদ যাচাই:
সর্বশেষ নামজারি পরচা, ডিসিআর, এবং খাজনার রসিদ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে জমির বর্তমান মালিকানা বৈধ এবং খাজনা পরিশোধ করা আছে।

৯. নকশা ও দাগ নম্বর যাচাই:
সি.এস., আর.এস., বা বি.এস. জরিপের নকশা নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে জমির অবস্থান এবং সীমানা নিশ্চিত করুন। সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে জমির সর্বশেষ বেচাকেনার তথ্য সংগ্রহ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

১০. দখল ও পথাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করুন:
জমিটি বর্তমানে কে দখলে আছে এবং এটি ভোগদখলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে কিনা তা যাচাই করতে হবে। জমির পথাধিকারের অবস্থা সরেজমিনে দেখে নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে যাতায়াত নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়।

জমি কেনা বড় বিনিয়োগ, তাই প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র যাচাই করে, আইনি পরামর্শ নিয়ে এবং জমির প্রকৃত অবস্থা নিশ্চিত হয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *