free tracking

কোরআনে আল্লাহ কেন মাকড়সার ঘরের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন?

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নানা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাকড়সার ঘরের দৃষ্টান্ত, যা কোরআনের সূরা আনকাবুত -এর ৪১ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সা; যে নিজের জন্য ঘর তৈরী করে। আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো সবচেয়ে দুর্বলতম; যদি ওরা জানত।” (সূরা আনকাবুত -এর ৪১)।

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৪৫ হাজার প্রজাতির মাকড়সা রয়েছে। মাকড়সা তার ঘর নির্মাণের জন্য একটি বিশেষ ধরনের সুতার ব্যবহার করে, যা তৈরি হয় তার পেটের বিশেষ স্পিনারেট থেকে। এই সুতা অত্যন্ত সূক্ষ্ম হলেও ইস্পাতের চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি শক্তিশালী। তবে এই সুতা দিয়ে নির্মিত ঘরটি অত্যন্ত দুর্বল ও সংবেদনশীল। বাতাসের সামান্য পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা সামান্য ধাক্কাতেই এটি ধসে পড়তে পারে।

কোরআনের আনকাবুত শব্দটি আরবি ভাষায় স্ত্রী মাকড়সাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে, যা পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও নিশ্চিত হয়েছে। স্ত্রী মাকড়সাই নিজের ঘর তৈরি করে, আর পুরুষ মাকড়সা সাধারণত আশ্রয়ের জন্য এর ওপর নির্ভরশীল থাকে।

কোরআনে ব্যবহৃত ‘ইত্তাখাত’ শব্দটিও স্ত্রীলিঙ্গ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রী মাকড়সা পুরুষের তুলনায় বড় ও অধিক শক্তিশালী হয়। এমনকি মিলনের পর যদি পুরুষ মাকড়সা দ্রুত ঘর থেকে বের না হতে পারে, তাহলে স্ত্রী মাকড়সা তাকে খেয়ে ফেলে।

মাকড়সার ঘরের দৃষ্টান্তের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো ইসলামের ইতিহাসে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন হিজরতের সময় এক গুহায় আশ্রয় নেন, তখন আল্লাহর হুকুমে এক মাকড়সা গুহার প্রবেশপথে জাল বুনে দেয়। শত্রুরা এসে দেখে যে প্রবেশপথে মাকড়সার জাল রয়েছে এবং ধরে নেয় যে সেখানে কেউ প্রবেশ করেনি। ফলে তারা ফিরে যায়, আর নবীজি নিরাপদে থাকেন।

কোরআনে শুধু মাকড়সার ঘরের উপমাই নয়, বরং সমুদ্রের ঢেউ, নক্ষত্রের কক্ষপথ, বায়ুমণ্ডলের স্তরসহ বহু বৈজ্ঞানিক বিষয় সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা আধুনিক গবেষণায় সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা মানুষের দৃষ্টি খুলে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন উপমা ব্যবহার করেছেন। মাকড়সার ঘরের দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, পার্থিব জীবনে যে সমস্ত বস্তু বা ব্যক্তি মানুষ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে, তা আসলে দুর্বল ও অনিরাপদ হতে পারে। শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করাই প্রকৃত নিরাপত্তার একমাত্র মাধ্যম।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/r3Q3oZDqvc0?si=nYyBz1tkZhWs0BkN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *