ভাষা শুধু আমাদের প্রকাশই করে না, বরং অন্যরা আমাদের সম্পর্কে কীভাবে ভাববে, সেটাও নির্ধারণ করে। বন্ধুর সাথে আড্ডা হোক, অফিসের মিটিং, বা কাউকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা,অনেক সাধারণ কথাই আমাদের কম বুদ্ধিমান মনে করাতে পারে, অথচ আমরা বুঝতেই পারি না! চলুন, দেখে নিই এমন কিছু বাক্য যা বলা এড়িয়ে চলা ভালো।
১. “আমি নিশ্চিত না, কিন্তু…”
এটা নির্দোষ শোনালেও বারবার এই কথা বললে অন্যদের মনে হতে পারে যে আপনি আত্মবিশ্বাসী নন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা একসঙ্গে চলে। তাই যদি কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত হন, তাহলে সরাসরি বলুন-নিজের কথার আগে সন্দেহ প্রকাশ করলে, সেটাই অন্যরা ধরে নেবে!
২. “আমি তো সত্যিই মরে যাচ্ছি!”
কফি টেবিলে পা ঠুকে ফেললে বা গরমে হাঁসফাঁস করলে আমরা সবাই এভাবে বলি। কিন্তু যখন সত্যিই বিপদের কিছু নেই, তখন “সত্যিই” শুনতে কেমন লাগে? অতিরঞ্জিত কথা বেশি ব্যবহার করলে মানুষ ভাবতে পারে আপনি বাস্তবতা আর রসিকতার পার্থক্য বোঝেন না।
৩. “বুঝিস, কিন্তু রাগ করিস না…”
৯৯% ক্ষেত্রে এই বাক্যের পর যা আসে, সেটা আসলেই অপমানজনক। এটি ব্যবহারের মানে আপনি হয়তো আগে থেকেই জানেন কথাটা খারাপ শোনাবে! যদি কাউকে কিছু বলতেই হয়, তবে সরাসরি বলুন, কিন্তু গঠনমূলকভাবে-“আমি তোমার জায়গা থেকে বিষয়টা বুঝতে পারছি, কিন্তু আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু আলাদা…” এমন কিছু বলতে পারেন।
৪. “আমি পারব না”
কখনো কখনো সত্যিই আমরা কিছু পারি না, আর সেটা স্বীকার করায় সমস্যা নেই। কিন্তু যদি চেষ্টা না করেই সবসময় “আমি পারব না” বলেন, তাহলে অন্যরা আপনাকে অদম্য মানসিকতা বা চেষ্টা না করার মানুষ ভাবতে পারে। মনোবিজ্ঞানী ক্যারল ডউইক বলেন, “পারব না” বলার চেয়ে “এখনো পারছি না” বলা ভালো-কারণ শেখার সুযোগ সবসময় থাকে।
৫. “এভাবে সবসময় হয়েছে”
এটা শুনলেই মনে হয়, আপনি নতুন কিছু শেখার বা পরিবর্তনকে স্বাগত জানানোর মানুষ নন। কিছু জিনিস ঠিকঠাক চললেও, শুধুমাত্র পুরোনো অভ্যাসের জন্য সেটাই চালিয়ে যাওয়া কি ঠিক? বরং নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন-এর চেয়ে ভালো উপায় আছে কি না।
৬. “বিশ্বাস করো, আমি এটা সম্পর্কে সব জানি”
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস অনেক সময় বিপরীত ফল দেয়। Dunning-Kruger প্রভাব বলে, অনেকেই কিছু কম জানলেও মনে করে তারা সব জানে! তাই, অন্যদের নিজের যোগ্যতা বোঝানোর চেয়ে কাজ দিয়ে সেটা প্রমাণ করা ভালো।
৭. “বলেছিলাম না?”
হ্যাঁ, সঠিক হওয়া ভালো লাগে, কিন্তু এই কথাটি বললে আপনি উদ্ধত বা অহংকারী শোনাতে পারেন। মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল গোলম্যান বলেন, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা মানে শুধু নিজের আবেগ বোঝা নয়, অন্যের অনুভূতির প্রতিও সংবেদনশীল হওয়া। তাই কারো ভুল ধরিয়ে দেওয়া বা ঠাট্টা করার বদলে, তাকে সাহায্য করাই ভালো।
৮. “বোর লাগছে”
কল্পনা করুন, কেউ তার ভালো লাগার কাজ বা স্বপ্নের কথা বলছে, আর আপনি বলে বসলেন, “বোর লাগছে”। এতে আপনি যে কেবল অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল তা-ই নয়, বরং নিজেকেও আগ্রহহীন ও একঘেয়ে শোনান। বরং চেষ্টা করুন প্রশ্ন করার বা আলোচনার দিক ঘুরিয়ে দেওয়ার।
৯. “আমি পড়ার সময় পাই না”
পড়াশোনা মানে শুধু পাঠ্যবই না-নতুন চিন্তা, সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি জানা। যখন বলেন, “আমি পড়ার সময় পাই না”, তখন অন্যরা মনে করতে পারে যে আপনি শেখার আগ্রহী নন। যদি সত্যিই সময় কম থাকে, অডিওবুক বা পডকাস্টের মতো বিকল্প ভাবতে পারেন!
১০. “যাই হোক”
এটা শোনামাত্রই মনে হয়, আপনি বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, বা আলোচনায় আর থাকতেও চান না। এটি সরাসরি কথোপকথন বন্ধ করে দেয়, যা ভালো কিছু নয়। বরং যদি কিছু নিয়ে কথা বলতে না চান, সেটা বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বলুন। এতে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা আরও ভালো হবে।
আমাদের ভাষা অনেক কিছু বলে দেয়,আমাদের চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, এবং অন্যদের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে। মনোবিজ্ঞানী কার্ল জুং বলেছিলেন, “ভাবনা করা কঠিন, তাই বেশিরভাগ মানুষ বিচার করে।” তাই, একটু সচেতন হলে আমরা শুধু স্মার্ট শোনাব না, বরং মানুষকে আরও ভালোভাবে বুঝতেও পারব!
আমারও মাঝেমধ্যে ভুল হয়, বিশেষ করে যখন ক্লান্ত থাকি বা তাড়াহুড়া করি। কিন্তু একটু মনোযোগ দিলেই আমরা সবাই আরও ভালোভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারব-আর তাতে অন্যদের চোখেও আরও বুদ্ধিমান মনে হব!
Leave a Reply