free tracking

যে ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছিল তারেক রহমানের উপর!

২০০৭ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে রয়েছে। এই দিনে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কথিত দুর্নীতির মামলায় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এরপর তিনি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। কিছু বিবরণ প্রকাশ্যে আসলেও পুরো চিত্র এখনো অনেকের কাছে অজানা।

সম্প্রতি এই বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে “তারেক রহমান: সংগ্রাম ও রাজনৈতিক যাত্রা” নামক বইয়ে, যা সম্পাদনা করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মহদুদ আলমগীর পাবেল ও গবেষক ড. সাইমু পারভেজ। বইটিতে তারেক রহমানের গ্রেপ্তারের পর তাকে বারবার রিমান্ডে নেওয়া এবং শারীরিকভাবে নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

তারেক রহমানের আদালতে বর্ণিত নির্যাতনের চিত্র

২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারেক রহমান তার ওপর চালানো নির্যাতনের মর্মান্তিক বিবরণ দেন। তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে চোখ বেঁধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই গৃহীত করা হয়েছে। আমি একজন রাজনীতিবিদ, কোনো সন্ত্রাসী নই। আদালত আমার চিকিৎসার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। এবার রিমান্ডে নিলে আমি আর বাঁচবো না।”

তিনি আরও বলেন, “শারীরিকভাবে এতটাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি যে এখন মেরুদণ্ড সোজা করেও দাঁড়াতে পারছি না। চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা মোটা কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে।”

মেডিকেল রিপোর্টে ভয়াবহ শারীরিক অবস্থা

তারেক রহমানের শারীরিক অবস্থার ভয়াবহতা তুলে ধরতে আদালতে চিকিৎসকদের দেওয়া মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, নির্যাতনের ফলে তার মেরুদণ্ডের ছয় ও সাত নম্বর হাড় ভেঙে গেছে এবং আরও কয়েকটি হাড় বেঁকে গেছে। মেরুদণ্ডের ৩৩টি হাড়ের মাঝে দূরত্ব কমে গেছে। চিকিৎসকরা বিশেষায়িত অর্থোপেডিক চিকিৎসার সুপারিশ করেন।

এই পরিস্থিতিতে আদালত তার রিমান্ডের সময়সীমা কমিয়ে একদিন করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

তারেক রহমানের ওপর চালানো এই অমানবিক নির্যাতনের বিবরণ প্রকাশ্যে এলে সারাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে অভিহিত করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো বহাল থাকে, যদিও একই সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

বিএনপি দাবি করে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাদের মতে, তার বিরুদ্ধে করা সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বর্তমানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই দাবি করেছেন যে তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় দোষী এবং আইনের শাসন অনুযায়ী তার বিচার হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে ২০০৭ সালের সেই নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস আজও বিএনপির সমর্থকদের কাছে এক দুঃসহ স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=TtM_Nz90FcM&ab_channel=EkusheyTelevision-ETV

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *