শরীরের হাড়সহ বিভিন্ন অঙ্গ এবং দাঁত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে ক্যালসিয়াম। মানুষ স্বাভাবিকভাবে মনে করেন ক্যালসিয়ামের কাজ শুধুই শরীরের হাড় মজবুত করা। কিন্তু আসলে দেহের নানা কার্যকারিতা পূরণ করে ক্যালসিয়াম। ব্লাড ক্লটিং, মাসল কন্ট্রাকশন, স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে ক্যালসিয়াম।
মানব দেহের প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম সংরক্ষিত থাকে হাড় ও দাঁতে। বাকি ১ শতাংশ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় রক্ত ও কলাকোষে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জেরে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। যার জেরে অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শুধু হাড় দুর্বলই করে দেয় না, সেই সঙ্গে মস্তিষ্ককেও দুর্বল করে দেয়। যার ফলে পেশি দুর্বল হয়, মানসিক চাপ বাড়ে, মাথা ঘোরায় এবং হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কিভাবে বুঝবেন
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে জানানো হয়েছে, কারো ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে সবার আগে তার পেশিতে যন্ত্রণা হতে শুরু করে। এমনকি পায়ে ক্র্যাম্পও দেখা দিতে থাকে।
সেই সঙ্গে ত্বকও শুষ্ক হতে শুরু করে। আর নখ দুর্বল হয়ে দ্রুত ভেঙে যেতে থাকে। এর পাশাপাশি চুলও দুর্বল হয়ে মোটা হয়ে যায়।
এই উপসর্গগুলো সম্পর্কে সচেতন না হলে এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কিন্তু স্নায়ুকে দুর্বল করে দিতে থাকে। যার ফলে মন সব সময় বিভ্রান্ত থাকে।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে শুরু করে। মনে অস্থিরতা দেখা দেয়। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এবং মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে মানুষ কল্পজগতে বাস করতে শুরু করে। এরপরেও যদি চিকিৎসা না করানো হয় অথবা ক্যালসিয়াম দেহে প্রবেশ না করে, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। তারপর থেকে জিভ, ঠোঁট, আঙুল ও পা কাঁপতে শুরু করে। প্রায় সময়ই পেশিতে ক্র্যাম্প দেখা দেয় এবং দেহের বিভিন্ন অংশে ফোলাভাবও তৈরি হয়। যার ফলে হার্ট রেট অনিয়মিত হয়ে যায় এবং খিঁচুনি উঠতে শুরু করে। ফলে যেকোনো সময় হার্ট ফেলিওর পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণ
সবার আগে ডায়েটের মধ্যে যদি ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তাহলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এরপরে সবথেকে বড় কারণ হলো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। সূর্যের আলো থেকেই মূলত আমরা ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি। যদি শরীরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না লাগে, তাহলে তার ফলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
আসলে শরীরে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে ক্যালসিয়ামও তৈরি হবে না। শরীরে ভিটামিন ডি থাকলে তা ক্যালসিয়ামকে শোষণ করে এবং রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়। ঘাড়ের কাছে একটি গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থাকে, যাকে প্যারাথাইরয়েড হরমোন বলা হয়। সেই গ্রন্থিতে সমস্যা থাকলেও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। কারো যদি কিডনি বিকল হয়ে যায়, তাহলেও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
Leave a Reply