সম্প্রতি ঢাবি ছাত্রলীগে পদ থাকা নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মহির আলম।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাস্তবতা ছিল বিগত ১৫ বছরে, সেটা হচ্ছে কি, আপনি যদি হলে থাকতে চান, আপনাকে কিন্তু বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগ করতে হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটে অমর একুশে হলে আমার ২০২২ সালে ছাত্রলীগের যে কমিটি উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিল।
ক্যাম্পাসে যতগুলো ঘটনা ঘটেছিল বিগত আমলে, আমি যদি কোনো ঘটনার সাথে জড়িত থাকি, কেউ যদি প্রমাণ দেখাতে পারে, আমি এখান থেকে পদত্যাগ করার জন্য সর্ম্পূণভাবে প্রস্তুত আছি। আমি আপনাকে বলতে পারি যে, হলের যারা আন্দোলন করেছে, তাদের ৯০% ছাত্র ছিল ছাত্রলীগের পদে ছিল। ছাত্রলীগ ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছে, এটার মূল ক্রেডিট কিন্তু ছাত্রলীগের, আমাদের মতো যারা ছিল, যারা আমরা এই জিনিসটা মেনে নিতে পারিনি, শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে আমরা আর কখনো দেখতে চাই না।
এই মর্তাদশ আমাদের যাদের মধ্যে ক্রিয়েট হয়েছিল, তারা আমরা এ কাজটা করেছিলাম, যে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে আমরা প্রথম বিতাড়িত করেছিলাম। বাংলাদেশে কিন্তু আজকে প্রায় ৫৩/৫৪ বছর পরে, যে ছাত্ররাজনীতিগুলো গড়ে উঠেছিল, ধরেন, তারা সবসময় কিন্তু একটা জিনিস যেটা করে, সেটা হচ্ছে তাদের মাদার পার্টি যেটা, সেটা সার্ভ করতে কিন্তু ব্যস্ত। আমরা ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বাকি সবাই এরকম ছাত্রসংগঠন যারা আছে, সবাই তাদের মাদার পার্টি যারা মানে উপর থেকে একটা কমিটি ঘোষণা করবে, ওইটার উপর কিন্তু তারা থাকতেছে।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মহির আলম বলেন, “আমরা দেখছি যে বিগত ৫/৬ বছরে একটা অর্থনৈতিক বাজেট মানে প্রতি ইয়ারে যে বাজেট ঘোষণা হয়, এই বাজেট ঘোষণার জন্য ও কিন্তু তারা মধুর ক্যান্টিনে এসে মিছিল দেওয়া শুরু করতো, স্বগত জানাত। কিন্তু এটা তো আসলে হওয়ার কথা না।
ছাত্ররাজনীতিগুলো হবে ছাত্রকেন্দ্রিক। ছাত্রকেন্দ্রিক রাজনীতিটাই আসলে হওয়া উচিত, যে তারা কি চাই। তাদের আশা-ভাবনা কি, এখানে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ, সবাইকে এখানে একত্রিত করা। সবাই যেন ছাত্র এবং এই একটা ছাতার নিচে যেন সবাই যেন থাকতে পারে, এটাই হচ্ছে আমাদের মেইন ফ্রেম।”
তিনি আরো বলেন, “এইজন্য এই অভূত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা যেরকম দেখেছি যে, ১৭ তারিখের পরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের ভাইয়েরা-বোনেরা যেভাবে মাঠে নেমে এসেছিল, তো সেই প্রেক্ষাপটে এখন কিন্তু ঢাবি, প্রাইভেট, ন্যাশনাল এই বিভেদটা আমরা আর রাখতে চাই না। সবাই ছাত্র, সবাই ছাত্রদের জন্য কাজ করবে এই স্লোগান নিয়ে, এই প্রেক্ষাপটে আমরা সিলেক্ট করেছি, “স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট”। স্টুডেন্টের জন্য যদি কাজ করতে পারি, এই কাজটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য কাজ হবে। এ প্রেক্ষাপট চিন্তা করে আমাদের নতুন ছাত্রসংগঠনের দাবিগুলো আসছে, সবার কাছে একটা দাবি ছিল, এই নতুন প্ল্যাটফর্ম আসলে সবার জন্য ভালো হবে।”
সদস্য সচিব মহির আলম বলেন, “আমরা আমাদের নয় দফা, নয় দফার মধ্যে একটা দফা ছিল, আমরা ক্যাম্পাসে লেজুঢ়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চাই না। এখানে অনেকেই ভাবতেছেন যে, আমরা আগে বললাম ছাত্ররাজনীতি চাই না। এখন আবার বলতেছি, ছাত্রসংগঠন নিয়ে আসতেছি, ব্যাপারটা কিন্তু এরকম না। আমরা বলছি যে, লেজুড়ভিত্তিক যে ছাত্ররাজনীতি সেটা আমরা আর চাই না।
এজন্য আমরা যে কাজটা করছি, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে নীতিগতভাবে, আমরা ক্যাম্পাসে, যেকোনো ক্যাম্পাসে, কোনো হলে, কোনো অনুষদে আমরা কমিটি দিবোনা। কারণ হলে এবং অনুষদে কমিটি দিলে কি হয়, সেটা আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখে আসছি। হল দখল, গণরুম, গেস্টরুম এই কালচারগুলো আবার চালু হবে। এজন্য আমরা চাই, কেউ যদি পড়াশোনা করতে চাই, মোস্ট ওয়েলকাম, কেউ যদি রাজনীতি করতে চাই, মোস্ট ওয়েলকাম। আমরা সবক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা করবো।”
তিনি বলেন, “একটা পক্ষ তারা কমিটি ঘোষণার আগে, ধরেন, আপনি এই দাবিটা তুলতে পারবেন যখন কমিটিটা ঘোষণা হবে। আমরা কমিটি ঘোষণাই করিনি, তার মধ্যে এভাবে যে বঞ্চিত টার্মটা, এটা আসলে পুরোপুরি ইলোজিক্যাল। কমিটি ঘোষণার পর যদি কেউ এটা করতো, আমরা এটা হয়তো মেনে নিতাম এবং সংগঠন থেকে আমরা ব্যবস্থা নিতাম, কি করা যায়, কি করা না যায়, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করতাম।
বাট এটা একটা, তৃতীয় একটা পক্ষ, প্রাইভেটের কিন্তু সবাই আসে নাই, আপনি দেখেন, এখানে ২০/২৫ জন ছেলে এসে একটা মব ক্রিয়েট করেছে, এবং এদের পাশাপাশি আরেকটা গ্রুপ চলে েএসেছে মহানগর গ্রুপ। এ গ্রুপরা মিলে তারা বলতেছে, তারা পদ পাই নাই। আসলে তো আমরা এখনো পদ ঘোষণাই করিনি। ঘোষণা করার পর যদি এই বিষয়গুলো হয়তো, তাহলে একটা ব্যাপার ছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা কালকে এই ঘটনার পর আমরা আবার বাকি যত স্টেক আছে, সব স্টেকের সাথে বসছি এবং রাত ২/৩টা পর্যন্ত আমরা মিটিংটা কন্টিনিউ করি।
আজকে আপনারা দেখলেন যে সবাই কিন্তু আসছে, সবাই আমরা একই ছাতার মধ্যে চলে আসছি। কালকে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, সেটার জন্য আমরা আসলে দুঃখিত। সবাই দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং এখন থেকে ভবিষ্যতে যেন আমরা একসাথে কাজ করতে পারি, সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।
ছাত্রলীগের পদ থাকার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাস্তবতা ছিল বিগত ১৫ বছরে, সেটা হচ্ছে কি, আপনি যদি হলে থাকতে চান, আপনাকে কিন্তু বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগ করতে হয়েছে। আমারো সে প্রেক্ষাপটে অমর একুশে হলে আমার ২০২২ সালে ছাত্রলীগের যে কমিটি উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিল।
আমি তখন হলে থাকার জন্য হোক, যে ভাবে হোক, আমার এই পদটা আসছে। আমি এটা হলফ করে বলতে পারি, কেউ একজন যদি আমার নামে অভিযোগ করে যে আমি গেস্টরুম, গণরুম, যে কোনো টর্চারের সাথে আমি জড়িত, যে কোনো ফৌজদারি অপরাধ, মানে ক্যাম্পাসে যতগুলো ঘটনা ঘটেছিল বিগত আমলে, আমি যদি কোনো ঘটনার সাথে জড়িত থাকি, কেউ যদি একটা প্রমাণ দেখাতে পারে, আমি এখান থেকে পদত্যাগ করার জন্য সর্ম্পূণভাবে রেডি আছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করেছি, যে আমার ছাত্রলীগের পদ ছিলো তখন, চাপে পড়ে হোক, যেভাবে হোক, আমাকে নেওয়া লাগছে, কিন্তু যখন আমি দেখেছি যে, আসলে এটা গ্রহণ করার মাধ্যমে কি আমি আমার নীতিকে বিক্রি করে দিবো কিনা! না, যে ২৪ সালে যখন কোটা আন্দোলন আসলো, তখন সবাই মিলে আমরা যারা হলে ছিলাম, আমি আপনাকে বলতে পারি হলের যারা আন্দোলন করেছে, তার ৯০% ছেলে ছিল, ছাত্রলীগের পদে ছিল।
তারা চাপে পড়ে ছাত্রলীগের পদটা নেওয়া হয়েছিলো, কারণ তাকে হলে থাকতে হয়তো, কারণ ঢাকা শহর আপরি জানেন যে, বাসা বাড়া করে থাকা একজন ছেলের জন্য অনেক বেশি কস্টিং-এর ব্যাপার। এই প্রেক্ষাপট থেকে যখন ছেলেরা দেখলো যে, না, এটা আমাদের জীবন-জীবিকার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, মানে আমাদের নীতি-নৈতিকতার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, তখন ছেলেরা কিন্তু এই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
ছাত্রলীগ ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছে, এটার মূল ক্রেডিট কিন্তু ছাত্রলীগের, আমাদের মতো যারা ছিল, যারা আমরা এই জিনিসটা মেনে নিতে পারিনি, শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে আমরা আর কখনো দেখতে চাই না। এই মর্তাদশ আমাদের যাদের মধ্যে ক্রিয়েট হয়েছিল, তারা আমরা এ কাজটা করেছিলাম, যে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে আমরা প্রথম বিতাড়িত করেছিলাম।”
Leave a Reply