free tracking

‘আ. লীগরে দিতাম ৫০ টাকা, এখন ১০০ দিতে চাইছি, তাতেও তারা রাজি না’

“আগে ৫০ টাকা দিতাম, আমরা বরজোর ১০০ টাকা দিতে পারব, এর অতিরিক্ত আমরা দিতে পারবো না”- হকার আমির আলীর কণ্ঠে ক্ষোভ, কারণ ফুটপাতে ৫০ ইঞ্চি জায়গার জন্য বছরে গুনতে হবে দেড় লাখ টাকা।

আমির আলী আরও বলেন, “এখানে আছি ৩৫ বছর যাবত। এই বাইতুল মোকাররমে বহু আইছে, বহু গেছে। এরকম অত্যাচার আর কখনো হয় নাই। তাই আমরা কই, আমরা কই, স্বাধীন কইরা লাইছি, স্বাধীন কইরা লাইছি, আমরা কি স্বাধীন করলাম?”

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পশ্চিমে লিংক রোডের এই ফুটপাতের দোকানগুলো চাঁদা নিয়ে দুপক্ষের সমঝোতা না হওয়ায় রোববার পুলিশের সঙ্গে বাঘবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় হকাররা। “দোকান বন্ধ হবে না, আমাদের পার্কিং বন্ধ নাই, দোকান বন্ধ থাকবো কেন?”

দুই মাস আগে জিপিএ ভবনের সামনের সড়কটি ৪৮টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য দেওয়া হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এতে গাড়ি পার্কিং ছাড়া হকার কিংবা অন্য কোনো ব্যবসা না করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। তবে এখানে ফুটপাত যেন বাজার, তাই গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জিপিএ ফটক পেরিয়ে আরো কিছু দূরে দাগ দেওয়া হয়। সিটি কর্পোরেশন যে লাইনে ব্যবসা করেন ৫০ জন হকার, সেখানে এবার হকাররা বসতে গেলে বাঁধে বিপত্তি। চাঁদার হার বাড়িয়ে দেয় নতুন ইজারাদার। এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি লোকবল নিয়ে ভাঙচুর করেন ইজারাদার শাহজালাল বাদল।

১০ দিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার রাতে সমঝোতার জন্য মহানগর দক্ষিণের শ্রমিক দলের নেতা মুন্সি বদরুল আলম সবুজের কাছে যায় হকাররা। বদরুল আলম সবুজ বলেন, “তারা আজ ১০-১২ দিন ধরে দোকান বন্ধ রাখছে। তাদের সাথে সমঝোতা যাওয়ার জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনে যাই। সিটি কর্পোরেশনও তাদের পক্ষ নেয়। আমরা বলি, ‘তোমরা তাদের সাথে সমঝোতা করো’। কিন্তু আমরা সমঝোতায় যাইনি। কালকে রাতে আমরা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে কইছে একটা সমঝোতায় যামু, তাদের কাছে আমরা গিয়েছিলাম। প্রথমে আমরা ৫০ টাকা কইরা প্রত্যেক দোকানে অফার দিছি, তারা মানে নাই। কইছে ৫০, ১০০ হবে না, প্রত্যেক দোকান ৫০ ইঞ্চি দেড় লাখ টাকা করে আমাদের দিতে হবে। যদি দাও, দোকান বসবে, নয়তো বসবে না। আমরা বলছি, আমরা এক টাকাও দেবো না। এ কারণে আমরা দোকান বসাইছি। প্রশাসন আইছে, আমরা কইছি, আপনারা গুলি করলেও করেন, আমরা জায়গা ছাড়ুম না, ছাদেও দেবো না, জায়গাও ছাড়ুম না।”

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ থেকে বিরোধিতা করেন অন্যরা। “যাই নাই, ওই যে চাঁদা চাইছে, দুই লাখ, এগুলো কোন কথা না। চাঁদা চাইবো কেন, এখানে চাঁদা চাওয়া হয় নাই।” এসময় ঘটনাস্থলে আসেন শ্রমিক দল নেতা সবুজ, সঙ্গে দলীয় কর্মীরা। অভিযোগ অস্বীকার করেন মহানগর শ্রমিক দলের এই নেতা। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের দোষ, যারা আছে, যারা বিগতদিনও এসব রাস্তাঘাট করছে, এখনো তারা করতেছে কুচুকরি মহল। এরা বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের অঘটন ঘটিয়ে আমাদের অনেকের নাম বলে। কারণ আমরা যেহেতু এগুলো করি নাই, আমাদের একটা সৎসাহস আছে। আমাদের বিরুদ্ধে কেউ যদি এগুলো অপপ্রচার করে, আমরা সেখানে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করি। তো যে ব্যক্তি আমাকে চিনে না, সে আমার নামে কিন্তু বলে ফেললো, সে এখন হয়তো আবার, আমি যখন বলছি, ‘আপনাকে থানায় দিব’, সে পালিয়ে চলে গেছে। তা আমাদের নামে যদি অভিযোগ করে, আমরা যদি সত্য হইতাম, তাহলে তো আমরা এখানে এসে প্রতিবাদ করতাম না। আমরা তো ‘অন দ্যা স্পট’ এসে প্রতিবাদ করছি আর যে অভিযোগ করছে, সে পালিয়ে গেছে গা।”

এদিকে সড়কে হকার বসা বিষয়ে জানতে চাইলে বারবার চেষ্টা করেও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবিকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি। তবে দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেন, “সমাধানের জন্য সম্পত্তি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হকার যারা আছেন, তাদেরকে দেড় লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়েছে, এমন অভিযোগ আমার নলেজে নেই। আমি চাঁদা দাবির কথাটা আমার নলেজে নেই, এটা আমি আপনার কাছ থেকে শুনলাম।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *