ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। অপেক্ষা রেফারির শেষ বাঁশির। যেই বাঁশিতে মিলবে সেমির টিকিট। কিন্তু হঠাৎই গ্যালারিতে শুনশান নীরবতা। স্তব্ধ গোটা আর্জেন্টাইন শিবির। অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে জন ইয়েবোহের দারুণ ক্রস হেডে জালে জড়ান কেভিন রদ্রিগেজ। ১-১ গোলে সমতায় চলে আসে ম্যাচটা। এক্সটা সময়ের খেলা না থাকায় সরাসরি ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর্জেন্টিনাকে টেনে তোলার দায়িত্বটা আরও একবার বর্তায় গোলরক্ষক এমেলিয়ানো মার্তিনেজের কাঁধে। এ দফায়ও টেনে তুলেছেন বাজপাখি খ্যাত মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার হয়ে টাইব্রেকারে শট নিতে এসে প্রথম বলটিই পোস্টে রাখতে পারেননি মেসি। ইকুয়েডরের প্রথম শট রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে বাঁচান মার্তিনেজ। দ্বিতীয় শটে ভুল করেনি জুলিয়ান আলভারেজ। এগিয়ে নেন দলকে। এদিকে ফের ইকুয়েডরের শট রুখে দেন মার্তিনেজ। দলকে এগিয়ে নেন তিনি। এরপর আর ভুল করেনি কেউ। ১ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতে যায় আর্জেন্টিনা। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের জয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে আর্জেন্টিনা। যেখানে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক মার্তিনেজ।
এদিন প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা বড় ভুলটা করে বসে ম্যাচের ৫৮ মিনিটে। ম্যাচে সমতায় ফেরার সেরা সুযোগটা পেয়ে যায় ইকুয়েডর। ডি বক্সে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন ডি পল। বল লাগে তার হাতে। পেনাল্টি পেয়ে যায় ইকুয়েডর। শট নিতে আসেন এনার ভ্যালেন্সিয়া। পেনাল্টিতে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকে ঠিকই বোকা বানিয়েছিলেন তিনি। তার শট নেওয়ার উল্টো পাশে ঝাঁপ দিয়েছিল মার্তিনেজ। তবে শেষ পর্যন্ত বোকা হতে হয়েছে তাকেও। তার নেওয়া দুর্বল শট বাধা পায় গোলবারে। বড় বিপদ থেকে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা।
এরপর দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেও ছন্দ খোঁজে পাচ্ছিল না আর্জেন্টিনা। ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়া দূরের কথা উল্টো ইকুয়েডর চাপে ফেলছিল আর্জেন্টিনাকে। আর্জেন্টিনার রক্ষণের কঠিন পরীক্ষাও নিচ্ছিল দলটি। তবে সেই পরীক্ষায় নির্ধারিত সময়ে পাস করে গেলেও হাল ছাড়েনি ইকুয়েডর। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত দারুণ লড়াই করেও ম্যাচে সমতা টানতে পারেনি ইকুয়েডর। মনে হচ্ছিল সেমিতে চলে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। তবে শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে ঘটে বড় বিপত্তি। জন ইয়েবোহের দারুণ ক্রস হেডে জালে জড়ান কেভিন রদ্রিগেজ। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো গ্যালারি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
যেখানে বরাবরের মতোই এদিনও দলকে টেনে তুলেছেন মার্তিনেজ। সবশেষ কোপা, কাতার বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে টাইব্রেকারে কখনোই আর্জেন্টিনাকে হারতে দেননি মার্তিনেজ। সেই মার্তিনেজ আরও একবার তাই করে দেখালেন। দলকে জেতালেন দারুণ দক্ষতায় দুটি গোল আটকে দিয়ে। ৪-২ গোলে জয় পেল আর্জেন্টিনা। অথচ, এমন ম্যাচে নিষ্প্রভ মেসি, গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন টাইব্রেকারেও। তাতে বড় বিপদেই পড়ে গিয়েছিল দল। তবে এ যাত্রায় আর্জেন্টিনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন দিবু ও দলের বাকিরা। দলকে নিয়ে গেছেন সেমিফাইনালে।
এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে এদিন চোট শঙ্কা দূর করে ম্যাচের শুরুর একাদশেই মাঠে নেমেছেন লিওনেল মেসি। তার সঙ্গে আক্রমণভাগে রাখা হয়েছে দারুণ ছন্দে থাকা লাওতারো মার্তিনেজকে। দু’জনে অবশ্য তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি গোলের। প্রথমার্ধে নিজেদের রক্ষণে কড়া পাহারা বসিয়ে আর্জেন্টিনাকে আটকে রাখছিল ইকুয়েডর। তাতে কঠিন হয়ে উঠছিল গোল পাওয়া। তবে সেই কঠিন বাধা টপকে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন মার্টিনেজ।
ম্যাচের ৩৫ মিনিটে এঞ্জো ফার্নান্দেজ গোলের উদ্দেশ্যে ডি বক্সে ঢুকে জোরাল শট নিলে সেটি বাধা পেয়ে কর্নার কিক পায় আর্জেন্টিনা। আর সেই কর্নার কিকটিই শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জন্য হয়ে উঠে আশীর্বাদ। কর্নার কিকটি প্রথমে হেড করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। তার হেড এক রকম গোলবারের আরেক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লিসান্দ্রো মার্টিনেজ পেয়ে যান একা। যা খুব সহজেই হেড দিয়ে জালে পাঠিয়ে দেন তিনি। আর্জেন্টিনা লিড নেয় ১-০ গোলে।
Leave a Reply