বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জাতিসংঘের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছিলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ককে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি অনুসন্ধানের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল পাঠান এবং চলমান পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেন।
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত উদ্যোগ
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ভলকার তুর্ক জানান, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে দমন করা হয়েছিল। সেই সময় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। জাতিসংঘ তখন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয় এবং সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে যে, যদি তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত হয়, তাহলে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাতে পারে।
পরিস্থিতির পরিবর্তন ও ছাত্রদের কৃতজ্ঞতা
ভলকার তুর্কের মতে, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ এবং সতর্কবার্তার ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এই উদ্যোগের ফলে দমন-পীড়নের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পায় এবং আন্দোলনকারীরা জাতিসংঘের ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। তিনি বলেন, “আমি যখন বাংলাদেশ সফর করি, তখন ছাত্ররা আমাদের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। আমাদের বক্তব্য এবং পদক্ষেপ তাদের সাহস জুগিয়েছে।”
অর্থনৈতিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
হার্ডটক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) তাদের সহায়তা বন্ধ করার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ওয়াশিংটন তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে, কারণ বৈশ্বিক উন্নয়নে এই ধরনের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার সুদানের মানবাধিকার পরিস্থিতি, সিরিয়া ও লেবাননের উদ্বাস্তু সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় চলমান সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জানান, বাংলাদেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি যেন এসব সংকটের সমাধান করা যায়। বাংলাদেশে আমাদের তৎপরতা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।”
ড. ইউনূসের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি
ড. ইউনূসের জাতিসংঘের প্রতি দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। তার অনুরোধের পর জাতিসংঘ যে পদক্ষেপ নেয়, তা ছাত্র আন্দোলনের দমন-পীড়ন কমাতে সহায়ক হয়। একইসঙ্গে, এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে আরও নিবদ্ধ হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের এই ভূমিকা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে।
Leave a Reply