ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৬ বছর বয়সী কন্যাশিশু মাহমুদা খাতুনকে বিষপান করিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সৎ মা হুমাইরা খাতুনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষক্রিয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’’
এ ঘটনার আগের দিন বুধবার দুপুরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাবা ও অন্যান্য স্বজনরা। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে ভর্তি করেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১ মার্চ সন্ধ্যায় সৎ মা হুমাইরা খাতুন কোমল পানীয়র সঙ্গে বিষ মিশিয়ে শিশুটিকে খাওয়ান। বিষক্রিয়ায় শিশুটির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।
বিষয়টি জানাজানি হলে শিশুটির পরিবার প্রথমে তাকে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ৪ মার্চ মঙ্গলবার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়, কিন্তু তার অবস্থা আরও খারাপ হলে বুধবার তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির বাবা শাহিন মোল্লা অভিযোগ করেন, ‘‘ছয় মাস আগে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে আমার এলাকার জিয়ারুল ইসলামের মেয়ে হুমাইরার সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে আমার বিয়ে হয়। দুই মাস আগে বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরি। ১ মার্চ সন্ধ্যায় আমার মেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং জানায় তাকে কোমল পানীয়র সঙ্গে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, কে খাওয়িয়েছে, সে জানায় তার সৎ মা হুমাইরা।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘মেয়ের জন্মের সময় তার মা মারা যান এবং তখন থেকেই সে দাদির কাছে থাকতো। আমি মেয়ের হত্যার বিচার চাই। গত বুধবার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আমি কোটচাঁদপুর থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। তারা বলেছে, চিকিৎসকের সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো অভিযোগ গ্রহণ করা যাবে না।’’
শাহিন মোল্লা আরও অভিযোগ করেন, ‘‘অভিযুক্ত হুমাইরা পালিয়ে গেছে এবং পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে, তাই তারা আমার অভিযোগ গ্রহণ করেনি।’’
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কোটচাঁদপুর সার্কেল) মো. মুন্না বিশ্বাস জানান, ‘‘বুধবার শিশুটির বাবা থানায় এসেছিলেন। তাকে চিকিৎসকের কাছে যাবতীয় সার্টিফিকেট নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপরই আমরা অভিযোগ গ্রহণ করব।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র ছাড়াই শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। এছাড়া সৎ মা হুমাইরাও বিষপানে অসুস্থ হয়ে কোথাও চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।’’
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে শিশু মাহমুদা খাতুন মারা গেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুন্না বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডেট সার্টিফিকেট নিয়ে তার পরিবার থানায় আসলে আমরা মামলা ও যাবতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান করব।’’
Leave a Reply