free tracking

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই ছোট্ট শিশুটির সর্বশেষ অবস্থা জেনেনিন!

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটি গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল পর্যন্ত শিশুটির অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে সিএমএইচের চিকিৎসক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিশুটির চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদরোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকরা।

ওই বোর্ডের একজন চিকিত্সক সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির যৌনাঙ্গ ও গলায় বড় ক্ষত রয়েছে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে গেছে। বুকের ওপর চাপ দেওয়ার কারণে ফুসফুসের যেসব জায়গায় বাতাস থাকার কথা না, সেসব জায়গায় বাতাস ঢুকে পড়েছে।

শিশুটি এখনো অচেতন। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আগে খিঁচুনি হলেও এখন আর হচ্ছে না। তবে রক্তে সংক্রমণ অনেক বেশি।

শিশুটির রক্তচাপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিশুটির অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন। শিশুটির সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।এদিকে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির নাম-পরিচয়, ছবি-ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজি) সংশ্লিষ্টদের এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তোভোগী শিশুটির চিকিত্সা এবং শিশু ও তার বড় বোনের (যার বয়স ১৪) নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করাসহ সার্বিক দেখভালের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সিএমএইচে শিশুটিকে দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তত্পর রয়েছে। ধর্ষণে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। শিশুটির মা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘স্বামীর অসুস্থতা ও অনটনের কারণে বড় মেয়েকে গত নভেম্বর মাসে বিয়ে দেন। মেয়ের বয়স ১৪ বছর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এর পরের মেয়েটির বয়স আট বছর। মেয়ে বোনের বাসায় যেতে চাইছিল না। জোর করে পাঠাইছিলাম। যদি না পাঠাইতাম তাহলে এই অবস্থা হতো না।’

বড় মেয়ে তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আগেও করেছিলেন বলে জানান এই মা। মেয়ের সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান। ধর্ষকদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়, সেটা নিশ্চিত করারও দাবি জানান।

পুলিশ সূত্র জানায়, বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের ওই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

৯০ দিনে ধর্ষণের বিচার করতে হবে : আইন উপদেষ্টা ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কাজ করছি, কিভাবে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করা যায়। বিচার শেষ না হওয়ার অজুহাতে আসামিকে জামিন দেওয়া যাবে না। প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকলে শাস্তির সুনির্দিষ্ট বিধান আইনে যুক্ত করা হবে।’

ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তরা জামিন পাবেন না জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ধর্ষণ মামলায় ৩০ দিনের পরিবর্তে এখন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করতে হবে। নারী সহিংসতা প্রতিরোধে এসব সিদ্ধান্তের আলোকে কয়েক দিনের মধ্যেই আইন সংশোধন করা হবে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে ধর্ষণ মামলায় ডিএনএ সার্টিফিকেট লাগত। অনেক এলাকায় ডিএনএ নেওয়ার সুবিধা নেই। শুধু ভিকটিম না, অভিযুক্তেরও একটি সার্টিফিকেট লাগত। এ জন্য মামলায় দেরি হয়ে যেত, আমরা সংশোধন আনব। শুধু উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন, মেডিক্যাল সার্টিফিকেটই যথেষ্ট, তাহলে সে ব্যবস্থা তিনি নিতে পারেন। মাগুরার মতো অনেক ঘটনাতেই আসামিরা হাতেনাতে ধরা পড়ে। এসব ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য সময়ক্ষেপণ রোধ করতে এই পরিবর্তনটা আমরা আনার চেষ্টা করছি।’

আইন উপদেষ্টা জানান, প্রতিটি জেলায় ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনে ব্যবস্থা নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি রুখতে একটি হটলাইন চালু করতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি আরো বলেন, ‘এটি হবে টোল ফ্রি। এটি তদারকি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ডেডিকেটেড সেল থাকবে। ধর্ষণ মামলার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ও একটি সেল করবে।’

নারীর প্রতি সহিংসতা কোনোভাবে গ্রহণ করা হবে না জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সুবিচার হবে। ধর্ষণ বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আইন সংশোধনের বিষয়টি আলোচনা করেছি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে একটা ফল পাওয়া যাবে।’

ধর্ষণে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল সিএমএইচে শিশুটিকে দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তত্পর রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং ধর্ষণে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ যাবত্ নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি।’ ভুক্তভোগী শিশুর নাম-পরিচয়, ছবি-ভিডিও অপসারণের নির্দেশ আদালতের মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির নাম-পরিচয়, ছবি-ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজি) সংশ্লিষ্টদের এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তোভোগী শিশুটির চিকিত্সা এবং শিশু ও তার বড় বোনের (যার বয়স ১৪) নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করাসহ সার্বিক দেখভালের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর জন্য ঢাকা ও মাগুরা জেলার দুজন সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।

এসংক্রান্ত এক রিটে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার রুলসহ এই আদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হামিদুল মিজবাহ ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন এই রিট করেন। রিটের পক্ষে তাঁরা নিজেরাই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ এনে শিশুটির মা যে মামলা করেছেন, ওই মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে এবং মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতেও হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান রিট আবেদনকারী দুই আইনজীবী।

আইনজীবী হামিদুল মিজবাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, “রিটের আরজির বাইরেও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে ‘সংবাদমাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ’সংক্রান্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারার বিধান ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই ধারার বিধান দেশজুড়ে সবাইকে জানানোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।” এসব আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে আগামী ১৭ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *