আমরা বাঙালি, আর বিশ্বজুড়ে বাঙালিদের রান্নায় সরিষার তেল খুবই গুরুত্ববহন করে। রান্নায় খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহারে খাবারের স্বাদই নাকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। হোক তো রেড মিট কিংবা ব্রয়লার মুরগি, সবজি বা পোলাও-খিচুড়ি, তেলের জোরেই স্বাদ বাড়ে।
রান্নায় স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও প্রচলিত রয়েছে যে, সরিষার তেল খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়। আবার শরীরে মাখালে শরীর গরম করে। এত গেল উপকারীর কথা। তবে কেউ কেউ আবার বলে থাকেন, সরিষার তেল খেলে নাকি হার্টের জন্য ক্ষতি। ফলে এ নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক দেখা যায়। কিন্তু আসলেই কি সরিষার তেল ক্ষতিকর, না এর উপকারিতা রয়েছে? এ ব্যাপারে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের ফর্টিস হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ডিরেক্টর ডা. শুভানন রায়। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
সরিষার তেল হার্টের জন্য কি ক্ষতিকর, না উপকারী: এ ব্যাপারে ডা. শুভানন বলেন, আমরা যখন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ছাত্র, তখন এ ব্যাপারে একটি প্রাথমিক গবেষণা করা হয়েছিল। তখন দেখা গিয়েছিল, সরিষার তেল ক্ষেত্রবিশেষ হার্টের ক্ষতি করে থাকে। তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে―সরিষার তেল হার্টের তেমন ক্ষতি করে না।
এ চিকিৎসক আরও বলেন, গবেষণার বাইরে নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারেও বিষয়টি খেয়াল করেছি আমি। এ জন্য সরিষার তেল যে হার্টের জন্য ক্ষতিকর, এমন ভিত্তিহীন ভাবনা মাথা থেকে ঝেরে ফেলাই উত্তম কাজ।
মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উপকারিতা: সরিষার তেলে মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে এই উপাদানটি। এ কারণে হার্টও বেশ সুস্থ থাকে। সরিষার তেলের এই উপকারিতা জানার পর আবার রান্নায় বেশি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, এই তেলে অল্প পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে। যা ক্ষতিকর। এ জন্য সরিষার স্বাস্থ্য উপকার পেতে চাইলে রান্নায় পরিমিত পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন থেকে জটিলতা সৃষ্টি: অনেক পরিবারেই সরিষার তেল খাওয়া হয়। তাদের কিন্তু হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম। এ যদি অতীত হিসেবে ধরা হয়, আর বর্তমানে যারা অন্যসব তেল ব্যবহার করেন এবং তাদের যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, তাহলে অধিকাংশেরই এইচডিএল ৪০-এর আশপাশে দেখা যায়।
মূলত ভালো কোলেস্টেরল কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়। যা হয়ে থাকে অধিক পরিমাণ ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে। এ জন্য হার্টের অসুখ হলেই সরিষার তেল ব্যবহারকে দায়ী না করে নিজের খাদ্যাভ্যাসে নজর দেয়া উচিত।
রাইস ব্র্যান অয়েল রাখতে পারেন: প্রতিদিনই তো কারও সিদ্ধ খাবার খাওয়া সম্ভব নয়। তবে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার খেতে চাইলে রাইস ব্র্যান অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে ক্ষতির ঝুঁকি কিছুটা কম। এ ক্ষেত্রে আবার কড়া ভাজা বা ডিপ ফ্রাই নয়, অবশ্যই হালকা গরম তেলে খাবার তৈরি করতে হবে। এতেই উপকার মিলবে।
অবশ্যই এক্সারসাইজ: হার্ট সংক্রান্ত যেকোনো অসুখ থেকে সুরক্ষায় নিয়মিত শারীরিক চর্চা করা জরুরি। এ জন্য নিজের ফ্রি সময়ে দিনে অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক চর্চা করতে হবে। শারীরিক চর্চায় যদি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তাহলে অন্তত নিয়ম করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। এতে অল্পতেই কোলেস্টেরল কমবে এবং প্রেশার ও সুগার দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
Leave a Reply