free tracking

দাফন সম্পন্নঃ ভাড়াটে খুনী এনে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা!

অ্যাম্বুলেন্সে একে একে আনা হয় তিন ভাইয়ের মরদেহ। আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

রবিবার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার খোয়াজপুরে নিয়ে আসা হয় সাইফুল সরদার, তার বড় ভাই আতাউর সরদার ও চাচাতো ভাই পলাশ সরদারের লাশ। এক নজর প্রিয়জনকে দেখতে ভীড় করেন স্বজনরা। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। পাড়া-প্রতিবেশিও শোকে পাথর। এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নিহত আপন দুই ভাইসহ তিন ভাইয়ের মরদেহ। পরিবারের দাবি ভাড়াটে খুনী এনে তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

স্বজনরা জানান, কীর্তিনাশা নদী থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে সদর উপজেলার খোয়াজপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদারের সাথে বিরোধ হয় প্রতিবেশি ব্যবসায়ী শাজাহান খান ও হোসেন সরদারের। এরই জেরে শনিবার খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুলের উপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন।

এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের ভাই ও প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসে। এ সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাইফুল ও তার বড়ভাই আতাউর সরদারকে। আহত হয় অন্তত ৫ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় জেলার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে। পরে বিকেলে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সাইফুলের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি জানাজায় অংশ নেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের কোন নেতাকর্মী জড়িত থাকলে কোন ছাড় নয় উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন জেলা বিএনপির নেতা। রবিবার সকালে নিহত সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৪৯ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকায় মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ। নিহত সাইফুলের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, চুরি, ছিনতাইসহ অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

নিহত সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘লোক ভাড়া করে এনে আমার ছেলেদের খুন করেছে। এই হত্যাকান্ড হোসেন সরদার ও শাজহান তাদের গ্র“প একমাস ধরে পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করেছে। আমার ছেলেদের হত্যার পর ঘরবাড়ি লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ছেলেরা বাঁচার জন্য মসজিদে আশ্রয় নিলেও খুনিরা ছাড় দেয়নি। পরে তাদের কুপিয়ে হত্যা করে। এর বিচার চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

সাইফুলের স্ত্রী সেতু বেগম বলেন, ‘এভাবে আমার স্বামী ও ভাসুর-দেবরকে কুপিয়ে হত্যা করবে এটা বুঝতে পারিনি। পাষন্ডরা কুপিয়ে তাদের রক্তাক্ত জখম করে। পরে মাথায় গুরুতর আঘাত করে হত্যা করে। এর কঠিন বিচার চাই।’

শরীয়তপুরের বাসিন্দা সাইফুলের আত্মীয় মিলন ঢালী বলেন, ‘আমরা এই হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার চাই। যারা এমন ঘটনার জন্য দায়ী তাদের ফাঁসি চাই। এভাবে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, এগুলো মানুষ হলে কখনই করতে পারতো না। হত্যার পর ঘরবাড়ি জালিয়েও দিয়েছে প্রতিপক্ষ। আমরা কিছুতেই এমন কর্মকান্ড মেনে নিতে পারছি না।’

মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জানান বলেন, ‘এমন হত্যাকান্ড কাম্য নয়। এই ঘটনায় বিএনপির কোন নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করছি।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) চাতক চাকমা বলেন, ‘তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। এলাকার আধিপত্য ও বালু ব্যবসার জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *