free tracking

তিমি না থাকলে সমুদ্রই থাকবে না? তিমি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে এক অনন্য পরিবাহকের ভূমিকা পালন করে তিমি। এটি শুধু সমুদ্রের বিচরণকারী বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী নয়, বরং সামুদ্রিক পুষ্টিতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য একটি উপাদান।

তিমি তার দৈহিক কার্যকলাপের মাধ্যমে সমুদ্রের গভীর থেকে উপরের স্তর পর্যন্ত পুষ্টি উপাদান ছড়িয়ে দেয়, যা সামগ্রিক সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানকে সমৃদ্ধ করে। এটি সমুদ্রের গভীর ঠান্ডা অঞ্চল থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পানিতে পুষ্টি উপাদান স্থানান্তর করে।

প্রথমত, মলত্যাগ ও প্রস্রাবের মাধ্যমে তিমি সমুদ্রের উর্বরতা বাড়ায়। গভীর সমুদ্রে খাবার গ্রহণের পর এটি পানির উপরে উঠে মলত্যাগ করে। এ মল ফাইটোপ্লাঙ্কটনের—অর্থাৎ ক্ষুদ্র সামুদ্রিক উদ্ভিদের জন্য—অপরিহার্য পুষ্টির উৎস। ফাইটোপ্লাঙ্কটন সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি, যা মাছ, কাঁকড়া, হাঙরসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্য হিসেবে কাজ করে।

দ্বিতীয়ত, ত্বক ঝরানোর মাধ্যমে তিমির শরীরে জমে থাকা মৃতকোষ থেকে পুষ্টি উপাদান বের হয়, যা ছোট সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তৃতীয়ত, বংশবৃদ্ধি ও সন্তান জন্মদানের সময় তিমির শরীর থেকে প্লাসেন্টা পানিতে মিশে যায়, যা সামুদ্রিক জীবের জন্য পুষ্টির অন্যতম উৎস।

বিজ্ঞানীরা তিমির এই পুষ্টি পরিবহন প্রক্রিয়াকে “গ্রেট হুয়েল কনভেয়র বেল্ট” নামে অভিহিত করেছেন, কারণ এটি সমুদ্রের এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে পুষ্টি উপাদান ছড়িয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, হাম্পব্যাক তিমি আলাস্কার মতো ঠান্ডা অঞ্চলে প্রচুর ক্রিল ও হেরিং খেয়ে নিজের ওজন বৃদ্ধি করে। শীতকালে বংশবৃদ্ধির জন্য এটি হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পৌঁছে। সেখানে অবস্থানকালে এটি খাদ্য গ্রহণ না করলেও প্রস্রাব, মলত্যাগ ও ত্বক ঝরানোর মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ অব্যাহত রাখে।

বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, প্রতিদিন ফিন প্রকৃতির তিমি প্রায় ২৫০ গ্যালন প্রস্রাব করে, যার মধ্যে থাকা নাইট্রোজেন প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সম্প্রতি বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে যে তিমি প্রতিবছর ঠান্ডা ও পুষ্টিকর অঞ্চল থেকে প্রায় ৪,০০০ টন নাইট্রোজেন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পৌঁছে দেয়। এছাড়াও তিমি বছরে ৪৫ হাজার টনেরও বেশি জৈব পদার্থ বহন করে, যা সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে মানুষ তিমির শিকার শুরুর আগে এই জৈব পদার্থের পরিমাণ ছিল আরও তিন গুণ বেশি।

হাওয়াইয়ের মতো অঞ্চলের জন্য তিমি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে সমুদ্রের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ, কিন্তু পুষ্টির মাত্রা কম। তিমি এসব অঞ্চলে পুষ্টি সরবরাহ করে সমুদ্রকে আরও উৎপাদনশীল করে তোলে।

তিমি শুধুমাত্র সমুদ্রের অন্যতম বৃহৎ প্রাণী নয়, বরং এটি সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সমুদ্রের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পুষ্টি পরিবহন করে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক। তিমির শিকার ও পরিবেশ দূষণের কারণে এদের সংখ্যা কমে গেলে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই তিমি সংরক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *