শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা অনুভূত হলে রোগীরা নানা ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করেন। তবে শারীরিক এই অস্বস্তি দূর করার জন্য প্রকৃতির স্নায়বিক শক্তিও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, সুস্থ সুন্দর পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের অন্যতম কারণ। মানুষের মনের ওপর প্রকৃতির শক্তিশালী ও ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এর উপকারিতা মানসিক শিথিলতার বাইরেও, যার বৈজ্ঞানিক প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ন্যাচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিকে তাকালে শারীরিক ব্যথা কমে যায়। এই পদ্ধতিটি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ওই গবেষণায়।
প্রকৃতি যেভাবে শারীরিক ব্যথা কমায়
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করা হয়েছিল। পরীক্ষাটির মাধ্যমে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সময় ব্যথার প্রতি মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪৯ জন ব্যক্তিকে তিনটি ভিন্ন দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। প্রথমত, হ্রদ এবং গাছের প্রাকৃতিক দৃশ্য; দ্বিতীয়ত, একই হ্রদের কাছাকাছি ভবনসহ একটি শহুরে পরিবেশ এবং শেষে, একটি অভ্যন্তরীণ অফিস দেখানো হয়। এ সময় গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের হালকা ধাক্কা দিয়েছিলেন এবং তাদের ব্যথার মাত্রা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, পার্থক্যগুলো ছিল আকর্ষণীয়। শহুরে বা অভ্যন্তরীণ দৃশ্য দেখার তুলনায় প্রকৃতির দৃশ্য দেখার সময় ব্যথার উপলব্ধি অনেক কম ছিল। তখন কেবল মানসিক শিথিলতা ছিল না বরং, মস্তিষ্কে প্রকৃত জৈবিক পরিবর্তনও ছিল, যা স্ক্যানের মাধ্যমে লক্ষ্য করা গেছে।
মস্তিষ্কের স্ক্যানগুলোতে দেখা গেছে, প্রকৃতির দৃশ্য উপস্থিত থাকাকালীন শারীরিক ব্যথার সংকেত প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী অঞ্চলগুলোর কার্যকলাপ হ্রাস পেয়েছে। ফলে পর্যবেক্ষণে জানা যায়, প্রকৃতির প্রভাব কেবল মনস্তাত্ত্বিক নয় বরং গভীরভাবে স্নায়বিকও ছিল।
গবেষণাটি জৈব পদ্ধতিতে ব্যথার চিকিৎসার দরজা খুলে দিয়েছে। প্রকৃতি ব্যথা উপশমের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রকৃতির সংস্পর্শে এসে প্রকৃতির দৃশ্যপটকে ব্যথা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে।
এই আবিষ্কার মানসিক সুস্থতা এবং সামগ্রিক শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের জীবনে সবুজের মূল্যকে দৃঢ় করে। গবেষকরা আরও যোগ করেছেন, ঘরে থাকা ব্যক্তিরা প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সময় দিতে পারেন। এমনকি ছোট ছোট উপায়ও (পার্কে হাঁটা, পাখি ও গাছ দেখা, বাগানে পানি দেয়া) তাদের অসুস্থতা নিরাময়ের কারণ হতে পারে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply