কিছুদিন পরই বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ঈদুল ফিতর। বৃহৎ এ উৎসবকে কেন্দ্র করে রকমারি মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি নিজেকে উপস্থাপনের জন্য নতুন নতুন ফ্যাশনেবল জামা-কাপড় পরা। সঙ্গে মানানসই গয়না ও জুতা তো থাকছেই। সেই ধারাবাহিকতায় মেয়েদের জুতার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ থাকে হাই হিল।
নিজেকে স্টাইলিশ ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপনের জন্য হাই হিল খুবই জনপ্রিয়। এটি আপনাকে যেমন লম্বা দেখায়, আবার পোশাক উন্নতও দেখায়। কিন্তু জানেন কী, এসব হাই হিল নিয়মিত পরার কারণে আপনার ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত হাই হিল পরলে মেরুদণ্ডের ক্ষতি হওয়াসহ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হাই হিল পরার কারণে যেসব সমস্যা হয়, তা নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন নয়াদিল্লির গঙ্গা রাম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস আচার্য। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
স্বাস্থ্য সমস্যা:
মেরুদণ্ডকে প্রভাবিত করে যেভাবে: সাধারণত, মেরুদণ্ডের একটি মৃদু S-আকৃতি থাকে, যা শরীরের ওজন সমানভাবে ছড়াতে সহায়তা করে। হাই হিল পরলে ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়। স্থির থাকার জন্য তলপেট স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা বেশি বাঁকানো হয়। ফলে তলপেটের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
সময়ের সঙ্গে ভঙ্গির এই পরিবর্তন পেশীতে টানটান ভাব, শক্ত হওয়া, এমনকি দীর্ঘমেয়াদী তলপেটের ব্যথার কারণও হতে পারে। অনেকেই আছেন যারা নতুন অবস্থানের সঙ্গে শরীর মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন, তখন তাদের উপরের পিঠ ও ঘাড়েও ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে।
হাই হিল যেভাবে জয়েন্ট ও পেশীকে প্রভাবিত করে: হাই হিলের প্রভাব মেরুদণ্ডের বাইরেও বিস্তৃত। হাঁটু ও নিতম্বের উপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। হাই হিল যেহেতু শরীরের ওজন কীভাবে প্রসারিত হয় এসব পরিবর্তন করে থাকে, এ জন্য এটি হাঁটুর উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। ফলে জয়েন্টে ব্যথা বা এমনকি প্রাথমিক আর্থ্রাইটিসের প্রধান কারণ হতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে হাই হিল পরলে অনেকেরই কাফের পেশীগুলো টানটান ও কম নমনীয় হয়। এ কারণে এসব শক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা অনেক বেশি এই হাই হিল পরেন, তারা ফ্ল্যাট জুতা পরে হাঁটার সমস্যা, পায়ে ব্যথা বা সমস্যা মনে করেন। এছাড়া সবসময় হিল পরলে সায়াটিকা, আর্থ্রাইটিস, গোড়ালি মচকে যাওয়া, পিঠের নিচের অংশ, হাঁটু ও পায়ে ব্যথাসহ নানা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাহলে কী হাই হিল ব্যবহার করবেন না: হাই হিল জয়েন্ট, পেশী ও মেরুদণ্ডে আঘাত করার সম্ভাবনা রাখে, এর অর্থ এটা য, আপনাকে একদমই হাই হিল পরা বন্ধ করতে হবে। তবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। হাই হিল সাবধানে ও পরিমিত পরিমাণে পরতে হবে। তাহলেই শরীরের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
পরামর্শ: দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঘন ঘন হাই হিল পরা যাবে না। তবে মাঝে মধ্যে পরতে পারেন। শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে ২ ইঞ্চির কম হিল পরুন। এটি মেরুদণ্ডের জন্য ভালো। টানটান হওয়া রোধে হ্যামস্ট্রিং, পিঠের নীচের অংশ ও পেশীগুলোকে স্ট্রেচ করুন।
পেশীর ভারসাম্যহীনতা ও খারাপ ভঙ্গি এড়াতে মাঝে মধ্যে ফ্ল্যাট জুতা পরে বিশ্রাম নিন। এছাড়া সহায়ক ইনসোল ব্যবহার করুন। ইনসোল চাপ সমানভাবে ছড়াতে ও চাপ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া জুতা পরে শারীরিক কোনো সমস্যা হলে বা জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।
Leave a Reply