ব্রাজিল কি তবে কোয়ার্টার ফাইনালের দল?

কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে কপাল পুড়েছিল ব্রাজিলের। হেক্সা তথা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য অপেক্ষা বেড়েছে বিশ্বকাপের সফলতম দলের। এদিকে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর কোপা আমেরিকায়ও অপেক্ষা বেড়েছে ব্রাজিলের। ২০১৯ এর চ্যাম্পিয়নদের এবার বিদায় করেছে উরুগুয়ে। কোপা আমেরিকার আসরেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে নয়বারের চ্যাম্পিয়নদের এবং সেটিও বিশ্বকাপের মতোই টাইব্রেকারে হেরে।

এখন প্রাশ্ন তোলাই যায়, ব্রাজিল কি তবে কোয়ার্টার ফাইনালের দল? কী বিশ্বকাপ, কী কোপা আমেরিকা- কোয়ার্টার ফাইনাল এলেই যে ব্রাজিলের কী হয়ে যায়! তাড়া করতে থাকে অজানা এক অভিশাপ। কোয়ার্টার ফাইনালে এলেই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী দলটা থাকে বিদায়ের শঙ্কায়।

বড় টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ব্রাজিলের। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল নেইমার, রিচার্লিসনরা। এবার কোপা আমেরিকায় নেইমার, রিচার্লিসনরা দলে না থাকলেও পূর্বসূরিদের দেখানো পথে হেঁটেছেন ভিনিসিউস জুনিয়র, রদ্রিগোরা। উরুগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরে গেছে ব্রাজিল। এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে।

এবারের কোপা আমেরিকার আসরটি এই শতকে নবম আসর। এর মধ্যে তিনবার চ্যাম্পিয়ন ও একবার রানার্সআপ হয়েছে ব্রাজিল। বাকি পাঁচ আসরের মধ্যে চারবারই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাদ পড়েছে তারা। বাকি একবার গ্রুপ পর্বই পার হতে পারেনি আসরের নয়বারের চ্যাম্পিয়নরা।


কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নেইমার। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন থিয়াগো সিলভা ও দানি আলভেজ। ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা ব্রাজিল ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল পুঁচকে হন্ডুরাসের বিপক্ষে। এর পরের দুই আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। কিন্তু ২০১১ সালে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত হওয়া আসরে ফের কোয়ার্টার ফাইনালে থামে ব্রাজিলের যাত্রা। এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। নির্ধারিত সময়ের খেলায় দুইদল গোলশূন্য ড্র করলে খেলা টাইব্রেকারে গড়ায়। টাইব্রেকারে ব্রাজিল একটি শটেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। ২-০ ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয় সেলেসাওরা।

চিলিতে ২০১৫ সালে বসে কোপা আমেরিকার পরবর্তী আসর। এবারের আসরেও ব্রাজিলের দৌড় থামে কোয়ার্টার ফাইনালে। এবারও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে তারা। এবারও প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় প্যারাগুয়েকে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা এবার ১-১ গোলের সমতায় শেষ হলে ফের টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো টাইব্রেকারে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। এবার হারের ব্যবধান ৪-৩।


২০১১ সালে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে একটি শটও জালে পাঠাতে পারেনি ব্রাজিল। সেই ম্যাচে পেনাল্টি মিসের পর হতাশায় ভেঙে পড়েন রবিনহো। ছবি: সংগৃহীত

পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসেছিল কোপা আমেরিকার শতবর্ষপূর্তির আসর। কিন্তু এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে ফল করে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ২০১৯ সালে পেরুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ব্রাজিল ২০২১ সালে ঘরের মাঠে পরের আসরে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়।

এ-তো গেল কোপা আমেরিকার খতিয়ান। বিশ্বকাপেও একই দুষ্টচক্রে আটকা পড়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ২০০২ সালে পঞ্চম ও শেষবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপের পাঁচ আসরের চারটিতেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। একমাত্র ব্যতিক্রম ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ। সেবার কলম্বিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল জোগো বোনিতোর ধারকরা। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্কের কালি মাখে ব্রাজিল।


২০০৬ সালে ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল নিয়েও কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারে ব্রাজিল। সেই ম্যাচে জিদান একাই কাকা-রোনালদিনহোদের নাচিয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে ড্র করার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলে হার মানে নেইমাররা। তারও আগে ২০১৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। সেই ম্যাচে ২-১ গোলে হেরে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

২০১০ সালেও একই ব্যবধানে কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে হারে ব্রাজিল। সেই আসরে রবিনহোর গোলে লিড নেয়ার পরও ওয়েসলি স্নাইডারের জোড়া গোলের কাছে হার মানতে হয়েছিল তাদের। এরও আগে ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল নিয়ে জার্মানিতে গিয়েছিল ব্রাজিল। রোনালদো, কাকা, রোনালদিনহো, আদ্রিয়ানো, দিদা, লুসিও, রবার্তো কার্লোসদের নিয়ে গড়া সেই দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে একাই হারিয়ে দেন জিদান। থিয়েরি অঁরির একমাত্র গোলে ব্রাজিলকে সেদিন হারিয়েছিল ফ্রান্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *