হিসাব-নিকাশে নতুন মোড়, কার হাতে উঠছে ব্যালন ডি’অর!

প্রতিটি ফুটবলারের কাছেই এ এক স্বপ্নের মতো। ব্যালন ডি’অর উঁচিয়ে ধরতে কে না চায়! চলতি বছরের অক্টোবরে ঘোষণা করা হবে এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম। তবে তার আগেই পাল্টে যাচ্ছে সব হিসাব-নিকাশ! ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার রিভালদো এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন গত মাসের প্রথম সপ্তাহেই। তাছাড়া রোনালদো নাজারিও, কাকা এবং নেইমার সবাই ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন তাদের স্বদেশি সতীর্থ ভিনিসিয়াসকে। তবে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল বাদ পড়ার কারণে সব হিসাব-নিকাশই যেন পাল্টে গেছে।

কার হাতে উঠবে এবারের ব্যালন ডি’অর? এমন প্রশ্নে খুব জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়াসের নাম। তার স্বদেশি সাবেক ফুটবলাররা টানা এক মাস ধরে ভিনিসিয়াসের নামই বলে গেছেন একটানা। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তারা বলেছেন ভিনিসিয়াসের নাম। তবে এখনও কি তারা এখন একই কথা বলবেন!

কোপা আমেরিকা শেষ হতে যাচ্ছে এক সপ্তাহের মধ্যে। একই সময়ে সমাপ্তি ঘটবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেরও। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে মৌসুমের সেরা দুটি টুর্নামেন্টের শেষ বেলায় এসে ব্যালন ডি’অরের পুরো হিসাব-নিকাশটাই যেন পাল্টে যাচ্ছে। এ বছর ব্যালন ডি’অর ঘোষণা করা হবে আগামী অক্টোবরের ২৮ তারিখ। তবে এই দৌড়ে যারা থাকবেন, তাদের প্রমাণ করার সুযোগ হয়তো শেষ হয়ে যাবে এ মাসেই। সাধারণত ব্যালন ডি’অরের বিবেচ্য সময় এক বছর। এ দফায় ২০২৩ সালের ১ আগাস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। তবে আগামী আগস্টের আগে ক্লাব ফুটবলে ব্যস্ততা নেই।

ফিফা বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বেশি মাতামাতি হয় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ এবং কোপা আমেরিকা নিয়ে। ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে তাই এ দুটি টুর্নামেন্টেরই প্রভাব ব্যাপক। তবে ভিনিসিয়াস কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারেননি কার্ডজনিত কারণে। ইউরো এবং কোপায় এখনও সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল বাকি আছে। কার হতে এ ‍দুটি টুর্নামেন্টের ট্রফি উঠবে তা বলাও বেশ মুশকিল। তবে ভিনি শিরোপা জয়ের রেইস থেকে ছিটকে গেছে আগেই।

শুধু স্বদেশিরাই নন, ভিনদেশিরাও ভিনিসিয়াসকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুমে দুর্দান্ত সময় পার করেছেন এ ব্রাজিলিয়ান। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৯ ম্যাচে গোল করেছেন ২৪টি এবং করিয়েছেন ১১ টি। এ ২৪ গোলের ৩টি এসেছে স্প্যানিশ সুপার কাপে বার্সেলোনার বিপক্ষে। একটি গোল করেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়ার বিপক্ষে। মাঝে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে তিনি ছিলেন সেরা খেলোয়াড়। রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে সেবার বড় অবদান ছিল ভিনিসিয়াসের।

যেসব নির্বাচিত সাংবাদিক ব্যালন ডি’অরের জন্য ভোট দিয়ে থাকেন, তাদের তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিতে বলা হয়। বিবেচ্য সময়ে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স, দলের সাফল্য এবং আচরণ ও ফেয়ার প্লে। তবে পারফরম্যান্স ও দলের সাফল্যে ভিনিসিয়াস এগিয়ে থাকলেও আচরণ ও ফেয়ার প্লে-তে পিছিয়ে আছে এ ব্রাজিলিয়ান।

ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে আছেন ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহ্যাম। রিয়াল মাদ্রিদে ভিনিসিয়াসেরই সতীর্থ তিনি। এ মৌসুমে ৪২ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ২৩টি। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১৩ গোল। এছাড়া, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও বেশ ভাল করছেন তিনি। এখনও শিরোপার দৌড়ে টিকে আছে তার দেশ। এরই মধ্যে চলতি ইউরোতে ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত দুটি গোলও করে ফেলেছেন বেলিংহ্যাম। গ্রুপ পর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন তিনি। আর শেষ ষোলোয় স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ০-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচের মাত্র দেড় মিনিট আগে বাইসাইকেল কিকে দারুণ এক গোল করে দলকে উদ্ধার করেন বেলিংহ্যাম। আর সেখান থেকেই কোয়ার্টার ফাইনাল পার করে ইংল্যান্ড এখন সেমিফাইনালে।

অন্যদিকে, ব্যালন ডি’অরের আরেক দাবিদার ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ১ জুলাই থেকে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়। রিয়ালে নাম লিখানোর আগে পিএসজির হয়ে শেষ মৌসুমে লিগ শিরোপা জিতেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও খেলেছেন তিনি। পিএসজির হয়ে ৪৮ ম্যাচে করেছেন ৪৪ গোল। সবশেষ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে করেছেন হ্যাটট্রিক। এরই মধ্যে ইউরোর সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে ফ্রান্স। যদি ইউরোর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে ইতিহাস গড়ার মতো কিছু একটা করে ফেলেন, তাহলে ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন এমবাপ্পেই।

এছাড়াও, ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে আছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। ২০২২ সালে দলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। আর চলমান কোপা আমেরিকায় সেমিফাইনালে ওঠেছে তার দল। মেসি ছাড়াও ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে আছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন, ফিল ফোডেন, জার্মানির টনি ক্রুসদের মতো তারকাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *