ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে সার্জিস আলমের মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একজন নোবেল বিজয়ী যিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে ছিলেন, দেশের সংকটে ছাত্রজনতার অনুরোধে তাকেই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। সেই ছাত্রদের একজন মুখপাত্র হঠাৎ করেই ডক্টর ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন নেটিজেনরা।
এই ঘোষণায় তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ আসার আলো দেখছে। তাদের কাছে ডক্টর ইউনূস হচ্ছেন দুর্নীতিমুক্ত, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সিস্টেমের বাইরে থাকা একজন ক্লিন নেতা। সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাংশ তার নেতৃত্বে আশাবাদী, বিশেষ করে যারা দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বে ক্লান্ত।
বিএনপি এতদিন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালালেও প্রফেসর ইউনূসের আবির্ভাব তাদের রাজনৈতিক কৌশলে টানাপড়েন তৈরি করেছে। সংস্কার কাজে সহায়তার পাশাপাশি তারা দ্রুত নির্বাচন চায়। অন্যদিকে, ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে ছাত্ররা বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন একটি ধারণা তরুণদের উপহার দিতে চায় বলে মনে করছেন সচেতনরা। বিএনপিও রাজনীতিতে শোনা যাচ্ছে নির্বাচনে জয়ী হলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী আর চুপুর জায়গায় থাকবেন ডক্টর ইউনূস, এতে করে সবগুলোই রক্ষা পাবে।
বিএনপির রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলা হয়েছে, আর এই ভারসাম্য রাষ্ট্রের প্রধান পথটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। যদি ডক্টর ইউনূস ছাত্রদের আহ্বানে রাজনীতিতে সক্রিয় হন, তাহলে তার কৌশল হতে পারে একটি শিক্ষিত তরুণ ও নাগরিক সমাজভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম গঠন, যেখানে দুর্নীতিমুক্ত ও দক্ষ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি থাকবে। তিনি টেকনোক্রেট ও সমাজের বিশিষ্ট জনদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে পারেন, যা দুই দলের বাইরে গিয়ে পরিবর্তনের আশ্বাস দিতে সক্ষম হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ বা জুন ২০২৬ এ হতে পারে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে নতুন রাজনৈতিক শক্তি সংগঠিত হওয়ার সময় কম পাওয়া যাবে, যা প্রতিষ্ঠিত সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য সুবিধাজনক। বিএনপি এই কারণেই দ্রুত নির্বাচন চায়, যাতে তৃতীয় পক্ষ জমে উঠতে না পারে। ইউনূস রাজনীতিতে সক্রিয় হলে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি সরকার ও বিরোধী উভয়পক্ষের জন্য চাপ তৈরি করবেন। একদিকে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা, অন্যদিকে জনগণের অংশে নির্ভরযোগ্যতা, তরুণ ভোটার, প্রথমবারের ভোটার এবং যারা রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়েছেন—এই তিন শ্রেণীর ভোটার তার শক্তির উৎস হতে পারে।
সবশেষে, এই সম্ভাব্য রাজনীতি ও নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ। যদি ইউনূস বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেন এবং জনগণের হৃদয় জয় করতে পারেন, তাহলে তিনি শুধু বিকল্প নেতা হবেন না, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় সূচনা করতে পারেন। তবে তার পথ সহজ নয়, সামনে রয়েছে পুরনো কাঠামো, সংঘাতময় রাজনীতি এবং আস্থার সংকট, যেগুলো তাকে অতিক্রম করেই সামনে এগোতে হবে।
Leave a Reply