free tracking

সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা!

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের এক ভোরে, ২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আয়াস কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে বেরিয়ে গভীর জঙ্গলের দিকে যাত্রা করেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তিনি এই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি ফিরে গেছেন অস্ত্র হাতে তুলে নিতে, তার সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়াস শিবিরে শিশুদের বার্মিজ ভাষা শেখান। তিনি বলেন, আমরা আমাদের মাতৃভূমি, আমাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা ফিরে পেতে লড়াই করব। আমি আমার জনগণের জন্য মরতেও প্রস্তুত। তার মতো শত শত রোহিঙ্গা এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধ মিলিশিয়া গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই গোপনে মিয়ানমারে প্রবেশ করে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ফিরে এসে অন্যদের সংগঠিত করছেন। আয়াস ছয় মাস ধরে জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যেখানে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় কঠোর অনুশীলন। প্রশিক্ষণে অস্ত্র চালনা, গোলাবারুদ ব্যবস্থাপনা, কৌশলগত তথ্য সংগ্রহ এবং মার্শাল আর্ট শেখানো হয়।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা চালায়, যাকে জাতিসংঘ “জাতিগত নির্মূলের উদাহরণ” বলে আখ্যায়িত করেছে। তখন প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কিন্তু শিবিরের জীবন তাদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এখানে শিক্ষা, কাজ বা ভবিষ্যতের কোনো সুযোগ নেই।

২০২১ সালে মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রোহিঙ্গারা এখন সেনাবাহিনী এবং এএ – উভয়ের হাতেই নির্যাতনের শিকার। আবু নিয়ামত উল্লা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের প্রথম শত্রু সেনাবাহিনী, তারপর আরাকান আর্মি। আমরা আমাদের ভূমি ও মর্যাদা ফিরে চাই।

একজন রোহিঙ্গা কমান্ডার, যিনি নিজেকে “রেইনিং সো” নামে পরিচয় দিয়েছেন, বলেন যে হাজারো রোহিঙ্গা এখন একত্রিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই, কিন্তু যদি তা না হয়, আমরা লড়াই করব। তাদের লক্ষ্য রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

তবে শিবিরে জোরপূর্বক নিয়োগেরও অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শিবির থেকে প্রায় ২,০০০ লোককে নিয়োগ করা হয়েছে, কখনো প্রলোভন দেখিয়ে, কখনো হুমকি দিয়ে।

রোহিঙ্গারা মনে করে, বিশ্ব তাদের সমস্যা উপেক্ষা করছে। আবু নিয়ামত উল্লা বলেন, আমরা সারাজীবন অবিচারের শিকার হয়েছি। এখন সময় আমাদের পক্ষে দাঁড়ানোর।

বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সহায়তা কমে যাওয়ায় শিবিরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। মার্কিন সাহায্য বন্ধ হওয়ায় সংকট আরও গভীর হতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের হতাশাকে বাড়িয়ে তুলছে।

মোহাম্মদ আয়াসের কথায়, আমি সবসময় বাড়ি ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটা আমাদের ভূমি নয়, আমরা এখানে থাকতে চাই না।

সুত্র : চ্যানেল আই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *