free tracking

কেন বড় হলে ঈদের আনন্দ হারিয়ে যায়? জানুন বৈজ্ঞানিক কারণ!

ঈদ একটি আনন্দের উৎসব, যা মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অত্যন্ত ধুমধামসহকারে উদযাপিত হয়। তবে, আমরা যখন ছোট ছিলাম, ঈদের আনন্দে ছিল এক ধরনের বিশেষ অনুভূতি—সেটি ছিল অমলিন, নিখাদ ও চিরন্তন। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কেন যেন ঈদের আনন্দের সেই আগের অনুভূতি আর ফিরে পাওয়া যায় না। অনেকেই প্রশ্ন করেন, “ঈদ কেন আর ছোটবেলার মতো হয়না?” এর পেছনে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং মানসিক প্রক্রিয়া, যা এই পরিবর্তনটি বুঝতে সাহায্য করতে পারে।

শিশুকালে ঈদের আনন্দ ছিল পুরোপুরি নতুন কিছু, যা ছিল আগমনের এক অচেনা আনন্দ। ঈদ মানে ছিল নতুন জামা, মিষ্টি, ঈদের দিন ঘুরতে যাওয়ার মজা, নতুন বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে, মানুষের কাছে ঈদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা পারিবারিক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়ায়, যা আগের মতো চমক বা উচ্ছ্বাস তৈরি করতে পারে না।

বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের প্রত্যাশা এবং দায়িত্বও বাড়ে। কর্মজীবন, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক চাপ ইত্যাদি জীবনযাত্রার নানা দিক ঈদের আনন্দে শিথিলতা সৃষ্টি করে। ছোটবেলায় যেখানে ঈদ ছিল অপেক্ষার, আনন্দের এবং চমকপ্রদ কিছু, বড় হলে তা হয়ে ওঠে অপেক্ষাকৃত নিয়মিত এবং প্রত্যাশিত।

বয়স বাড়ার সাথে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা পরিবর্তিত হয়, যা হরমোনাল প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। শিশুদের শরীরে ডোপামিন (আনন্দের হরমোন) বেশি নিঃসৃত হয়, যা তাদের আনন্দ এবং উচ্ছ্বাসের অনুভূতি বাড়ায়। কিন্তু, বয়স বাড়লে সেই ডোপামিনের নিঃসরণ কমে যায়, ফলে আমাদের আনন্দের অনুভূতি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এটি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ঈদের আনন্দের অনুভূতিতে পার্থক্য সৃষ্টি করে।

বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম ও প্রযুক্তির প্রভাব ঈদের আনন্দে অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে। ছোটবেলায় ঈদের জন্য প্রস্তুতি ছিল হাতে হাতে, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু এখন মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক মানুষ ভার্চুয়ালি ঈদ উদযাপন করেন। এজন্য বাস্তবিক যোগাযোগের অভাব ঘটতে পারে, যা ছোটবেলায় ছিল ঈদের আনন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

বড় হওয়া মানে জীবনে নানা ধরনের দায়িত্ব ও চাপের সম্মুখীন হওয়া। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ঈদের দিনে তাদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত সমস্যাগুলো থেকে একটুও বিশ্রাম নিতে পারেন না। কর্মজীবন, পারিবারিক চাপ এবং আর্থিক সমস্যা অনেক সময় ঈদের আনন্দকে ব্যাহত করে। তবে শিশুদের জন্য ঈদ ছিল আনন্দের উপলক্ষ্য, যা কোনো চাপ বা চিন্তা থেকে মুক্ত ছিল।

ছোটবেলায় ঈদ ছিল এক ধরনের সার্বজনীন ঐক্য। সমাজের সবাই একত্রিত হত ঈদের আনন্দে, জামা-কাপড়, মিষ্টি, উপহার, প্রার্থনা—সবই ছিল একত্রিত। তবে আজকের সমাজে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্যের কারণে, ঈদের আনন্দের এই ঐক্য আগের মতো অনুভূত হয় না। অনেকে পারিবারিক বা আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ঈদের পূর্ণতা উপভোগ করতে পারেন না।

শিশুরা নতুন কিছুতে খুব সহজেই আগ্রহী হয়ে থাকে। ঈদের দিন তাদের জন্য ছিল নতুন জামা, মিষ্টি, বাড়ির বাইরে গিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করা। এছাড়া, ঈদের মধুর স্মৃতিগুলিও শিশুর মনে গভীরভাবে স্থায়ী হয়, যা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত তাদের মনে অটুট থাকে। বড় হলে অবশ্য এইসব পুরনো অনুভূতিগুলির নতুনত্ব হারিয়ে যায় এবং দায়িত্বের ভারে সেই আনন্দ আর তেমন অনুভূত হয় না।

ঈদের আনন্দে যে পরিবর্তন আসে, তা মূলত বয়স, জীবনের অভিজ্ঞতা, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, এবং বর্তমান সমাজের অবস্থার উপর নির্ভরশীল। তবে, ঈদের আনন্দ ছোটবেলার মতো না হলেও, যদি আমরা সেই মুহূর্তগুলির মানে উপলব্ধি করি এবং আবারও প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে চেষ্টা করি, তবে ঈদ যে তার পরিপূর্ণতা হারিয়েছে তা বলা যাবে না।

জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঈদের আনন্দের রূপ বদলাতে পারে, তবে তার মৌলিক স্পিরিট বা মূল অনুভূতি কখনও হারিয়ে যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *