বিশ্বে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা, তা হয়তো নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আর আমাদের দেশে ফুটবলপ্রেমীদের উম্মাদনা দেখে খোদ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলও চমকে যায়। বাংলাদেশের এমন পাগলামির জন্যই তো এ দেশে এসে ঘুরে গেছেন আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এরপর ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহোও এসেছিলেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে ফুটবলের সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক হলো আর্জেন্টিনা, আরেক দল হচ্ছে ব্রাজিল। তবে এর বাইরেও অন্যান্য দলের সমর্থক আছে, তবে সেটা হাতে গোনা কিছু মানুষ। তবে আমাদের যত উম্মাদনা এই দুটি দলকে নিয়েই। প্রতি চার বছর পর বিশ্বকাপের খেলা শুরু হলে আমাদের দেশের ফুটবলপ্রেমীদের পাগলামিটাও যে বেড়ে যায় বহুগুণ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে কোপা আমেরিকার খেলা। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট এটি। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে ব্রাজিল। আর কোপা আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ১৫ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে।
তবে এবার ভিন্ন এক বিতর্কে মেতে উঠেছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকরা। চলতি কোপা আমেরিকায় পেনাল্টি শুটআউটে উরুগুয়ের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। অন্যদিকে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে ইকুয়েডরকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এরপর থেকেই এ নিয়ে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে তর্কটা জমে উঠেছে বেশ।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছর পেনাল্টিতে হারে না আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে গত দুই বছরে পেনাল্টি শুটআউটে জিততে পারেনি ব্রাজিল। বর্তমানে আর্জেন্টিনা অন্যতম একটি শক্তিশালী দল। একটা সময় ভালো একজন গোলরক্ষকের অভাব বেশ ভুগিয়েছে দলকে। ২০০৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনা হেরেছিল জার্মানির কাছে। তারপর ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও জার্মানির বিপক্ষে ৪-০ গোলে হেরেছিল আলবিসেলেস্তেরা। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়েরে একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই জার্মানির বিপক্ষেই গোল হজম করে হেরে যায় আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল মেসিদের।
তারপর থেকে আর্জেন্টিনার গল্পটা একেবারেই ভিন্ন। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ২০২২ বিশ্বকাপে খেলতে যায় আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে হেরে বসে মেসিরা। তারপর তাদের আটকায় কে। এরপর একের পর এক চমক দেখিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। ফাইনালে ফ্রান্সকে পেনাল্টি শুটআউটে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের অন্যতম নায়ক গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
গত দুই বছরে তিনটি ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে গেছে আর্জেন্টিনা। আর সেই তিনটি ম্যাচেই জিতেছে তারা। কাতার বিশ্বকাপের নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২-২ গোলে শেষ হয় নির্ধারিত সময়। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে তাদেরকে হারিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। আর ফাইনালে তো ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আলবিসেলেস্তেরা। সবশেষ চলতি কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে জিতে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল।
অন্যদিকে গত দুই বছরে মাত্র দুটি ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে গেছে ব্রাজিল। গত কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত সময় শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়। পরে পেনাল্টি শুটআউটে তাদের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। সবশেষ কোপা আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের গোলপোস্টের দায়িত্বে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা গোলকিপার অ্যালিসন বেকার। তবুও উরুগুয়ের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল।
Leave a Reply