free tracking

কারাগারে যেমন কাটছে আ. লীগ নেতাদের ঈদ!

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের জন্য মাঠে আয়োজন করা হয় ঈদের জামাত। এ জামাতেই গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর যারা পালাতে পারেনি, তাদের ঠিকানা এখন কারাগার। আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতাকর্মীদের ছিল রাজকীয় জীবন, জমজমাট ঈদ। দলের নেতাকর্মী আসত, সেলামি ও শুভেচ্ছা বিনিময় হতো।

কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বাস্তবতা ভিন্ন। পরিবার-পরিজন ছাড়া দাপুটে এসব নেতার এবারের ঈদ নিশ্চয়ই নিরানন্দে কাটছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এ কে এম মাসুম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের দিন বন্দিদের জন্য সার্বিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

তারা অন্তত এক দিনের জন্য হলেও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। ঈদে বন্দিদের জন্য বরাবরের মতো এবারও বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার পাবেন পরিবার থেকে আসা খাবার।
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

অর্থবিত্ত বা ক্ষমতা, কী ছিল না তার? এখন সবই হাতছাড়া। অসহায় হয়ে ঈদ করছেন কারাগারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুও অসহায় ঈদ পালন করছেন কারাগারে। অথচ একসময় তার কাছে হাজিরা দিতে ও দোয়া নিতে হতো বহু শিল্পপতির। এমনকি বরিশাল অঞ্চলে নেতা হতে হলে হাতেগোনা যে দু-তিনজনের আশীর্বাদ প্রয়োজন হতো, তিনি তাদেরই একজন।

প্রতাপশালী এই নেতার গ্রেপ্তারের পর তার ঢাকার ও ঝালকাঠির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে।

এদিকে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার শেষ বয়সে এসে কারাগারের যন্ত্রণা না নিতে পেরে সম্প্রতি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারই ঘোষণা দিয়েছেন।

আদালতে তিনি বলেন, ‘আমার ৭৬ বছর বয়স। আমার চোখ ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নিতে পারছি না। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করব না।’

বাড়িভর্তি মানুষ, সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীসহ কী না ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথিত ছোট ভাই সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। অথচ সবচেয়ে প্রভাবশালী এই প্রতিমন্ত্রী এখন সবচেয়ে অসহায়, ঈদ করছেন কারাগারে।

গত ১০ মার্চ দুদকের মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসে সাংবাদিকদের দেখে জুনাইদ আহমেদ পলক বলতে শুরু করেন, কথা বললেই রিমান্ড ও মামলার সংখ্যা বাড়ে। হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আটকে রাখে। কথা বলে কী লাভ?

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শাজাহান খান, কাজী জাফরউল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির অসহায়ত্বেও কেউ পাশে নেই। তাদের ঈদ কারাভ্যন্তরেই কাটছে নীরবে-নিভৃতে।

এর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ মালেক, আব্দুর রহমান বদি, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক এমপি ও হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দীক রোজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশিসহ দলটির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতা এবার কারাগারে ঈদ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *