ব্রাজিলের ‘ঐতিহাসিক’ ৭ গোল হজমের দশ বছর আজ!

২০১৪ সালের ৮ জুলাই। ব্রাজিলের ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের ভিড়। উচ্ছ্বাসে ভরপুর দেশটির সমর্থকরা। স্টেডিয়ামে একটু পরই শুরু হবে ব্রাজিল-জার্মানির মধ্যকার ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল।

ম্যাচ উপলক্ষে সব আয়োজন সম্পন্ন। সেখানকার দর্শকদের আনন্দ অভিব্যক্তি দেখে রোমাঞ্চকর এক লড়াই শুরু হওয়ার প্রহর গুনছে পুরো ফুটবলবিশ্ব। টুর্নামেন্টে তখন পর্যন্ত ব্রাজিল ও জার্মানি দুই দলই অপরাজিত।

কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ইনজুরির স্বীকার ব্রাজিলের প্রধান তারকা নেইমার জুনিয়র হাসপাতালে। আর টানা দুই ম্যাচে হলুদকার্ড দেখে নিষিদ্ধ দলের মূল ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। ফলে একটু ব্যাকফুটে স্বাগতিকরা।

ব্রাজিলের দুই তারকা না থাকলেও আশা করা হচ্ছিল, দুর্দান্ত এক সেমিফাইনাল দেখবে বিশ্ব। কারণ ২০০২ বিশ্বকাপে এই জার্মানিকেই ২-০ গোলে হারিয়ে পঞ্চম শিরোপা জিতেছির ব্রাজিল। কিন্তু কে জানতো, কিছুক্ষণ পরই লেখা শুরু হবে ব্রাজিল ফুটবলের কালো অধ্যায়।

এ এমন এক অধ্যায়, যেখানে ঢাকা পড়বে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ইতিহাসের আগের সব ক্ষত। ব্রাজিলের মতো দলকে হতে হবে সেমির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় খলনায়ক। ঘরের মাঠে টানা ৬২ ম্যাচে অপরাজিত সেলেসাওদের হজম করতে হবে ন্যাক্কারজনক হার।

টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিলের সঙ্গে ফুটবল ইতিহাসের বিভীষিকাময় ঘটনাই ঘটেছিল সেদিন। ম্যাচের ১১ মিনিটে কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে ডানপায়ের শটে ব্রাজিলের জালে প্রথম কম্পন সৃষ্টি করেন টমাস মুলার। সেই শুরু।

এরপর ২৯ মিনিট শেষে ম্যাচের স্কোরলাইনের চিত্র- ব্রাজিল ০-৫ জার্মানি। মারাকানায় সেদিন ৬ মিনিটে ৪ গোল হজম করে ব্রাজিল। ২৩ মিনিটে জার্মানির মিরাস্লাভা ক্লোসা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।

এতে অনেক ব্রাজিল সমর্থকের অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে পানির স্রোত। এরপর একের পর এক গোলে সেই পানির স্রোত বইতে শুরু করে পুরো মারাকানায়।

২৪ মিনিটে গোল করেন টনি ক্রস। তার ২ মিনিট পরই নিজের দ্বিতীয় গোল করেন জার্মান মিডফিল্ডার। ২৯ মিনিটে মাঝমাঠের খেলোয়াড় সামি খাদিরার গোলে ব্যবধান ৫-০ করে জার্মানি। প্রথমার্ধে আর গোল করেনি তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের ৬৯ ও ৭৯ মিনিটে আরও দুটি গোল করেন জার্মান ফরোয়ার্ড আন্দ্রে হর্স্ট স্কুরেল। এতে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ব্রাজিল ০-৭ জার্মানি। ম্যাচের শেষ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন অস্কার।

৭-১ গোলের সেই হার ব্রাজিল তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম বড় ট্র্যাজেডি। ঘরের মাঠে সবচেয়ে বড় আসরে এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কোনো দল পায়নি। সেই ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূরণ হলো আজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *