free tracking

যে কৌশলে ‌‘হাইপ্রোফাইল’ লোকদের ফাঁসাতেন মডেল মেঘলা আলম!

রাজধানীর আলোচিত মডেল ও উদ্যোক্তা মেঘলা আলম ও তার সহযোগী দেওয়ান সমীরকে ঘিরে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশের ও বিদেশি ‘হাইপ্রোফাইল’ ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের কৌশল নিয়ে সক্রিয় ছিল একটি সুপরিকল্পিত চক্র, যার অন্যতম মুখ ছিলেন মেঘলা।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের মূল টার্গেট ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। মডেল মেঘলা আলম কৌশলে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতেন। ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত গোপনে ভিডিও করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করা হতো।

চক্রটির সাম্প্রতিক শিকার ছিলেন সৌদি আরবের সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলান। তার কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় মানব পাচারকারী ও চক্রের মাস্টারমাইন্ড দেওয়ান সমীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মেঘলাকে আটক করা হয় গত ৯ এপ্রিল, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটকের আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন, ‘পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক’ তার বাসার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।

রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ, তদন্তের অগ্রগতিসূত্র জানায়, সৌদি রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছিলেন যে, একজন নারী তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এখন অর্থ দাবি করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, যেখান থেকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেওয়ান সমীরকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। পরে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন।

মেঘলার অতীত ও আলোচনায় আসামেঘলা আলম ২০২০ সালে ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ খেতাব জয় করেন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও অর্থনৈতিক ক্ষতির অপচেষ্টা করছিলেন।

আইনি প্রক্রিয়া ও হাইকোর্টের রুলমেঘলার বাবা হাইকোর্টে রিট করলে, আদালত গ্রেফতারের বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, কারণ না জানানো, ২৪ ঘণ্টার বেশি ডিবি হেফাজতে রাখা এবং আইনজীবীর সহায়তা থেকে বঞ্চিত করার মতো কাজগুলো আইনবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না।

ডিবি প্রধান প্রত্যাহার, প্রশাসনে চাঞ্চল্যএ ঘটনার রেশ ধরে ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। অনেক কর্মকর্তার ধারণা, মেঘলা আলমকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া বিতর্ক ও চাপে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *