রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের পেঁয়াজচাষি মজিবুল ইসলাম ১০ এপ্রিল রাজশাহীর পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য এনেছিলেন ৮ মণ পেঁয়াজ। ১৮ টাকা কেজির বেশি কোনো ব্যবসায়ী দাম বলেননি। রাগ করে পেঁয়াজের বস্তা আড়তে ফেলে তিনি বাড়ি চলে যান।
আড়তদার পরে ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে টাকা ওই চাষির বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
গতকাল বুধবার ওই ৮ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করলে মজিবুল আরও ২৫ হাজার টাকা বেশি পেতেন। চাষিরা বলছেন, তাঁদের হাতের পেঁয়াজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
মজিবুল ইসলাম জানান, সেদিন খরচ বাদ দিয়ে তিনি ৮ মণ ৭ কেজি পেঁয়াজের দাম পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ১৭০ টাকা। আজ বিক্রি করলে ৪০ হাজার টাকা পেতেন। তাড়াতাড়ি পেঁয়াজ কেন বিক্রি করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, পেঁয়াজ সংরক্ষণের তাঁর কোনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে ওই দামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই পেঁয়াজচাষি বলেছিলেন, রাজশাহীর পাইকারি বাজারে সেদিন সর্বনিম্ন ১০ টাকা কেজি থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। দু–একজন ২৮ টাকা কেজি বিক্রি করতে পেরেছেন। সাধারণ পেঁয়াজের বাজার ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি।
গতকাল রাজশাহীর পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজ ৩৮ টাকা থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা হয়েছে। মজিবুল ইসলাম বলেন, এবার তাঁর ৪৫ মণ পেঁয়াজ হয়েছে। সবই বিক্রি করে দিয়েছেন। আর ১৫ মণ মাত্র ঘরে আছে। তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করা শুরু করেছেন। আর দামও বাড়া শুরু করেছে।
এদিকে সরকার সাধারণ চাষিদের পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করার জন্য রাজশাহীতে ১০০টি মডেল ঘর নির্মাণ করেছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ সে ঘরগুলো পেঁয়াজ রাখার উপযোগী হবে। চাষিরা সেই সুবিধা পুরোপুরি পেলেন না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মুড়িকাটা ও চারা পেঁয়াজ মিলে মোট ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৩০০ টন। বুধবার পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ পেঁয়াজ আহরণ করা হয়েছে। এখনো ২২ শতাংশ পেঁয়াজ মাঠে রয়েছে।
Leave a Reply