জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ঘটে যাওয়া নারকীয় জঙ্গি হামলা গোটা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই হামলায় ২৮ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু এবং বহু আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতবাসী। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনীতি, কূটনীতি এবং ক্রীড়া মহল—সবার প্রতিক্রিয়া দৃঢ় ও প্রতিশোধপরায়ণ। হামলার পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর মতো একটি কৌশলগত অপারেশনের পরিকল্পনায় নেমেছে বলে সূত্রের দাবি।
এই হামলার ছায়া এবার এসে পড়েছে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কের উপরও। বহুদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ। এবার বিসিসিআই আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে আইসিসি-কে (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল) চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন ভবিষ্যতের কোনও আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারত ও পাকিস্তানকে এক গ্রুপে না রাখা হয়। এর ফলে আইসিসির ইভেন্টে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ কমে যাবে অনেকটাই। বিসিসিআইয়ের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক বার্তার মতোই প্রতিপক্ষকে চাপের মুখে ফেলতে পারে।
ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে ‘সফট ডিপ্লোমেসি’র গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। সেক্ষেত্রে, বিসিসিআই-এর এমন কড়া অবস্থান পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (PCB) জন্য বড় ধাক্কা হতে চলেছে। কারণ একাধিক ICC টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি টিভি রেটিং আসে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকেই। সেই ম্যাচ কমে গেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পিসিবি-সহ গোটা পাকিস্তান ক্রিকেট।
বিশেষত, এই বছর ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুই দল মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, পিসিবি আগে থেকেই জানিয়েছে তারা ভারত সফর করবে না। আইসিসি, বিসিসিআই এবং পিসিবির ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, পাকিস্তানের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ক্রিকেট সম্পর্ককেও ক্রমেই জটিল করে তুলছে।
অন্যদিকে, ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ নিয়েও দানা বাঁধছে অনিশ্চয়তা। টি-২০ ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তান তিনবার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, সাম্প্রতিক হামলার পর ভারতীয় বোর্ডের এই কড়া অবস্থানের ফলে টুর্নামেন্টের সূচি নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে, প্রাক্তন ক্রিকেটার ইরফান পাঠান, বিরাট কোহলি সহ বহু তারকা খেলোয়াড় পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ইরফান বলেন, “এই কারণেই কষ্টটা বেশি, কারণ হামলার শিকার হয়েছেন নিরীহ পর্যটকেরা, যাঁরা আনন্দ করতে গিয়েছিলেন।” কোহলিও কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “যতটা কঠিন শাস্তি সম্ভব, দিতে হবে।”
সব মিলিয়ে, পহেলগাঁও হামলা শুধু রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রেই নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান ক্রীড়া সম্পর্কেও প্রবল ছাপ ফেলেছে। বিসিসিআই-এর অবস্থান আইসিসিকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে, যা ভবিষ্যতের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে আরও দুর্লভ করে তুলবে। তবে এখন দেখার বিষয়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কী অবস্থান নেয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কথিত ‘মাস্টারপ্ল্যান’ কতটা কার্যকর হয়।
Leave a Reply