free tracking

ভারত কি সত্যিকারের বন্ধু, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান বাস্তবতা!

ঢাকার নিশুতি রাতের আঁধারে, উঁচু ভবনগুলোর জানালায় আলো জ্বললেও দেশের অর্থনীতির গভীরে রয়েছে এক অদৃশ্য ছায়া — প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। ট্রান্সক্রিপ্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের পটভূমি এখন আর নিছক কূটনৈতিক সৌজন্যতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বহু স্তরে প্রভাব বিস্তার করছে।

চুক্তির ফাঁদে আবদ্ধ বাংলাদেশপানি বণ্টন, বন্দর ব্যবহার, বিদ্যুৎ আমদানির মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতেও ভারতের অদৃশ্য প্রভাব স্পষ্ট। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার, রেল ও সড়ক সুবিধা — সবকিছুতেই বাংলাদেশ উদারতা দেখালেও বিনিময়ে পেয়েছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি আর একতরফা বিধিনিষেধ।

বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তা উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের জীবনে নেমে এনেছে হতাশা। একদিকে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

অসম বাণিজ্য ও চুক্তির বেড়াজালবিদ্যুৎ চুক্তিতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি একপেশে দায়বদ্ধতার উদাহরণ। ব্যবহারে হোক বা না হোক, বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা দেশীয় উৎপাদন খরচের তুলনায় বহুগুণ বেশি। একইসঙ্গে ভারতীয় নিম্নমানের পণ্য অনায়াসে ঢুকছে বাংলাদেশি বাজারে, অথচ বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে পড়ছে নানা বিধিনিষেধের বেড়া।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো ঘটনাও ভারতের দখলদার মনোভাবের নজির। প্রয়োজন হলে রপ্তানি বন্ধ, আবার নিজেদের অতিরিক্ত উৎপাদন হলে দাম কমিয়ে রপ্তানি — এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

রাজনীতি ও সংস্কৃতিতেও ভারতের প্রভাববাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠে এসেছে। কোনো নির্দিষ্ট দল বা নেতৃত্বকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা স্পষ্ট।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ভারতীয় টিভি সিরিয়াল, রিয়েলিটি শো, ও নাটকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটি ‘সফট পাওয়ার’ প্রতিষ্ঠা করছে ভারত। যার ফলে দেশের নিজস্ব নাটক, চলচ্চিত্র ও শিল্পীরা জায়গা হারাচ্ছেন, এবং তরুণ প্রজন্ম ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে নিজেদের শেকড় ভুলতে বসেছে।

নতুন ভোরের সূচনাএই অন্ধকারময় পরিস্থিতির মধ্যেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যাত্রা শুরু করেছে।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “সম্পর্ক থাকবে, তবে সমানে-সমান চোখে চোখ রেখে।” তার দৃঢ় নেতৃত্বে দেশের শিল্প, রপ্তানি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং বিকল্প জ্বালানি খাতের উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ঢাকার রাস্তায় নতুন স্লোগান উঠেছে:”এই দেশ কার? — জনগণের!”এই স্লোগান এখন কেবল শব্দ নয়, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

শেষ কথাভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এই সম্পর্ক কি প্রকৃতপক্ষে সমতার নাকি নিয়ন্ত্রণের? এই প্রশ্নের উত্তরই আজ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *