free tracking

যুদ্ধের আগেই ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকে নিয়েই বিস্ফোরক মন্তব্য!

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুক হামলায় অন্তত ২৮ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতে আবেগ ও ক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে। এ হামলায় আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের দিকে অভিযোগ তুলে এই উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে ভারতের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাৎ বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান ব্যয়বহুল যুদ্ধের সামর্থ্য রাখে না। তাই উত্তেজনা কমিয়ে কূটনীতিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

জিও নিউজের এক নিবন্ধে তিনি লিখেন, ভারতের রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম ও অন্যান্য মহল হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার ডাক দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত, যুদ্ধ অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আর ভারত ও পাকিস্তান—দু’টি দেশই দরিদ্র, যারা এ ধরনের ব্যয়বহুল যুদ্ধ চালাতে অক্ষম।

দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ফলাফল অনিশ্চিত। যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা বলা অসম্ভব। নেপোলিয়ন ও হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন দ্রুত জয়ের প্রত্যাশায়, কিন্তু তাদের পরিণাম সবাই জানে। তৃতীয়ত, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।

সুতরাং যুদ্ধের কথা বলা নিরেট অবিবেচকের কাজ। আমার মতে, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেটিই সবচেয়ে বিচক্ষণ পথ।

তিনি বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, পুলওয়ামা হামলায় ভারতের বহু সেনার মৃত্যুর জন্য তিনি ভারতীয় জনগণের কষ্ট বুঝতে পারছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, পাকিস্তানও সন্ত্রাসবাদের শিকার, এবং ভারত চাইলে যেকোনো ধরনের তদন্তে সহযোগিতার জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত রয়েছে, যাতে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা যায়।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাৎজু।
কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সাবেক সভাপতি আরও লেখেন, ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি এ ধরনের পদক্ষেপের আইনি বৈধতা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, তবে এগুলো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া যা কেবল পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে এবং উভয় দেশের দরিদ্র জনগণের ওপর দুর্ভোগ চাপিয়ে দেবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের বহু অঞ্চল ইতোমধ্যেই তীব্র পানির সংকটে ভুগছে। সিন্ধ ও পাঞ্জাব প্রদেশের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে। ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান সরকার যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে অভিহিত করেছে।

যদি ভারত থেকে আসা পানি বন্ধ বা কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে পাকিস্তানের কিছু অঞ্চল কারবালার চিত্র ধারণ করতে পারে। এতে পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি নয়, বরং সাধারণ গরিব জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মার্কন্ডেয় কাৎজু লেখেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই দরিদ্র দেশ। উভয় দেশের সাধারণ মানুষের উচিত নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ না করে একত্রিত হয়ে তাদের আসল শত্রু—মহামারী আকারে দারিদ্র্য, ব্যাপক বেকারত্ব, ভয়াবহ শিশু অপুষ্টি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্য, এবং জনসাধারণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অভাবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।

তিনি বলেন, আমি সম্মানের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের জনগণ ও নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা আবেগ নয়, বিচক্ষণতা দিয়ে কাজ করে এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ইমরান খান যে যুক্তিসঙ্গত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা অনুসরণ করে শান্তির পথ বেছে নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *