মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতাদের রক্ষায় দলটির নেতারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মীর কাসেম আলীর কন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম।
শনিবার নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মীর কাসেম জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ছিলেন। যুদ্ধাপরাধ মামলায় ২০১২ সালের জুন মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৬ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর রাতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কাসেমকন্যা তাহিরা তার স্ট্যাটাসে বলেন, পারিবারিকভাবে তারা আমাদের অনেক কাছের, বিশেষ করে তাহের চাচা মীর কাসেম আলীর। কিন্তু জামায়াত দল হিসেবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছে তাদের নেতাদের ফাঁসি আটকাতে। দিনের আলোর মতো যা আজ স্বচ্ছ। এটা তো সবাই একমত হবেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহিদি মর্যাদাই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা এখন এবং আগামীতেও। এছাড়া আপনজনেরা তো শুধু ধোকা দিয়েছে।
তাহিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, জামায়াত আমাকে এমপি পদ অফার দিলেও আমি সারাজীবন এটা বলে যাব যে, নিজের হাতে হত্যা না করলেও আমাদের বাবাদের হত্যার পেছনে তারাও দায়ী। এটা আমার কাছে এক প্রকার ক্রাইম অব অমিশন।
‘তারপরও আপনারা ভালো থাকেন, আমার বাবাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ভালো থাকুক’, যোগ করেন কাসেম কন্যা।
প্রসঙ্গত, ক্রিমিনাল অমিশন বা অপরাধমূলক অবহেলা বলতে এমন অপরাধকে বোঝায়, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আইনসম্মত কর্তব্য পালনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা না করে অপরাধ সংঘটিত হতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। অর্থাৎ আইনগতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তার ওপর অর্পিত আইনি কর্তব্য পালন না করে এবং তার ফলে অপরাধজনিত ক্ষতি ঘটে, তাহলে একে একটি পূর্ণাঙ্গ অপরাধের বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর আগে জামায়াতের সমালোচনা করে দলটির সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে মোহাম্মদ নাদিমুর রহমানও সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেন। নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি (২০০১-২০০৩) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (২০০৩-২০০৬) মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১১ মে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজামীপুত্র লেখেন, কথাগুলো শতভাগ সত্য এবং যৌক্তিক৷ আর জামায়াতের নীতি-আদর্শ থাকবেই বা কী করে? জামায়াতের যেই ছয় নেতার অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের এই ফাঁসি ঠেকাতে পারলেই না জামায়াতের নীতি-আদর্শ ঠিক থাকতো৷উলটো ছোটজন বলেছিলেন- ‘তারা এখন জেলখানায় আরাম করুক আর আমরা এখন একটু খাই’৷ আর বড়টা তো পরে মুখ ফসকে বলেই ফেলেছিলেন- ‘তারা জেলখানায় পচে মরুক, আমরা আমাদের সংগঠন গোছাবো, না হলে আমাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বানিয়ে দেবে৷’ পরবর্তীতে তো আবার আরেকটা সলিমুদ্দীন না কলিমুদ্দীন কি নাম, এক বক্তৃতায় তো বললেনই- ‘আমরা যদি আইন না মানতাম তাহলে আপনারা আমাদের একটা নেতাকেও ফাঁসি দিতে পারতেন না’৷ আরে, ছাত্ররাও যদি আইন মানতো, তাহলে এই জালেম হাসিনা সরকারের পতন জীবনেও ঘটাইতে পারতো না৷
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কথা বলে কে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায় এটা পুরো ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। এখন আবার শুরু করেছে সকালে এক কথা আর রাতে আরেক কথা বলা৷ আবার অন্যদিকে এক নেতার এক কথা আবার আরেক নেতার আরেক কথা৷ অর্থাৎ কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই৷
স্ট্যাটাসে নিজামীপুত্র মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আরেক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের জন্য নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে আজহার যেন দ্রুত মুক্তি পেয়ে জামায়াতের হাল ধরেন এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন নাদিমুর।
এছাড়া সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর প্রীতি সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি নিয়েও বির্তক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নানা মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করেন শিবিরের সাবেক সভাপতি এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তবে স্ট্যাটাসটি দেওয়ার কিছু সময় পরই সেটি ডিলিট করে দেন তিনি।
Leave a Reply