free tracking

ইয়েমেনে মার্কিন হামলা: বেসামরিক র,ক্ত,ক্ষ,য় ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন!

অতি সম্প্রতি ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশে আফ্রিকান অভিবাসীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৬৮ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার হুথি-নিয়ন্ত্রিত দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে থাকা ১১৫ জন অভিবাসীর আশ্রয়কেন্দ্রটি রোববার রাতে সরাসরি মার্কিন বিমানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

হুথি গোষ্ঠী একে ‘সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

একই দিনে ইয়েমেনের বিচার ও মানবাধিকার মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন আগ্রাসনে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১,৩০০-রও বেশি বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

তবে এই বিবৃতিতে সোমবার ভোরে ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের সাদা শহরে আফ্রিকান অভিবাসীদের ওপর চালানো সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যেখানে ১১৫ জন হতাহত হয়েছেন।

ইয়েমেনি মন্ত্রণালয়ের দাবি, মার্কিন বাহিনীর হামলায় শুধু সাধারণ মানুষের প্রাণহানিই নয়, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

ইয়েমেনের সানা, হোদাইদা ও সাদা প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই হামলা ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন’ বলেও অভিযোগ তুলেছে ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ।

বিশেষ করে সম্প্রতি সানা শহরের বানি আল-হারিথ জেলার থাকবান এলাকায় একটি আবাসিক বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হয়। যাতে নারী-শিশুসহ অনেক নিরীহ মানুষ হতাহত হন।

হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরা টিভি জানিয়েছে, এখনো বিস্ফোরিত হয়নি এমন মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ইয়েমেনে ‘নির্ণায়ক এবং শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পরে হুথিদের ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসের’ হুমকিও দিয়েছিলেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের মার্চ থেকে মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে ১,২০০-রও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে হুথি। যার বেশিরভাগই বেসামরিক এলাকাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।

মূলত গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে হুথিদের সমুদ্রপথে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া মার্কিন সামরিক অভিযানের ফলে ইয়েমেন নতুন করে মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে।

ইয়েমেনি মন্ত্রণালয়গুলো এই হামলাগুলোকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করে দায়ীদের আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

আল-মায়াদিন বলেছে, ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক আক্রমণ এখন আর কেবল সামরিক গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেই নয়; বরং সাধারণ বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশুর জীবন ও জীবিকাকে সরাসরি বিপর্যস্ত করে তুলছে।

দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ চলছে, যাতে নারী ও শিশুসহ অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছেন।

গত ২৭ এপ্রিল আল-মায়াদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বানি আল-হারিথ জেলার থাকবান এলাকায় মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত ৮ জন ইয়েমেনি নাগরিক নিহত হন। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিলেন।

এর একদিন আগে, ২৬ এপ্রিল মার্কিন বাহিনী কামারান দ্বীপ ও রাস ইসা তেলবন্দরসহ (যেটি পশ্চিম ইয়েমেনের লোহিত সাগরের উপকূলে হোদাইদা প্রদেশের আল-সালিফ জেলায় অবস্থিত) বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততা চলমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বিশ্ব কি এবার এগিয়ে আসবে, নাকি ইয়েমেন আরও একটি ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *