সময়টা ১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাস। জার্মান ম্যাগাজিন, ‘স্টার্ন’ এবং ব্রিটিশ সংবাদপত্র, ‘দ্য সানডে টাইমস’ দাবি করে যে তাদের কাছে শতাব্দীর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঐতিহাসিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটা রয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটাই হয়ে দাঁড়ায় শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ‘হোক্স’ বা ধাপ্পার মধ্যে অন্যতম, যাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ শুধুমাত্র লাখ লাখ টাকাই ব্যয় হয়নি, অনেকের সুনাম ঝুঁকিতে ফেলেছিল ওই কেলেঙ্কারি।
আজ থেকে ৪২ বছর আগে, ১৯৮৩ সালের ২৫ এপ্রিল জার্মান ম্যাগাজিন একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের ধারণা ছিল তাদের এই প্রতিবেদন একটা অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক ‘স্কুপ,’ (অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী সংবাদমাধ্যমের চেয়ে আগে প্রকাশিত কোনও খবর) যা বিশ্বের সামনে প্রকাশ করা দরকার।
প্রতিবেদনটা ছিল তাদের হেফাজতে থাকা ‘অ্যাডলফ হিটলারের অজানা ব্যক্তিগত ডায়েরি’ নিয়ে। যা তাদের অনুমান অনুযায়ী ‘খাঁটি’ ছিল।
বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের কাছে তাদের এই অসাধারণ এবং ‘এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন’ তুলে ধরার জন্য ‘স্টার্ন’-এর পক্ষ থেকে হামবুর্গে একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনও করা হয়।
এই প্রতিবেদন যে নিশ্চিতভাবেই বিশ্বব্যাপী শিরোনাম হিসাবে প্রাধান্য পাবে, সেটা আশা করেছিল ওই পত্রিকা। সেটি হয়েও ছিল কিন্তু যেভাবে ‘স্টার্ন’-এর পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল, সেভাবে নয়।
ঘটনার তিন দিন আগে ‘স্টার্ন’-এর লন্ডনে অবস্থান করা সম্পাদক পিটার উইকম্যান বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তারা ‘পুরোপুরি নিশ্চিত’ যে তাদের হাতেই হিটলারের ব্যক্তিগত ডায়েরিগুলো রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তার বক্তব্য ছিল, আমরা শুরুতে বেশ সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু একজন গ্রাফোলজিস্ট (হাতের লেখা বিষয়ক বিশারদ) ওগুলো (ওই ডায়রি) খতিয়ে দেখেছিলেন। একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন যিনি ওই লেখা যাচাই করেন। আমাদের সঙ্গে প্রফেসর ট্রেভর-রোপারের মতো ঐতিহাসিক ছিলেন এবং তারা সকলেই নিশ্চিত যে ওগুলো একেবারে খাঁটি।
হাতে লেখা ওই জার্নালে লেখার সময়কাল ছিল ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত- অর্থাৎ হিটলারের তৃতীয় রাইখের পুরো সময়কাল জুড়ে।
উইকম্যান বিবিসিকে বলেছিলেন, ৬০টি ডায়েরি আছে, সেগুলো দেখতে অনেকটা স্কুলের খাতার মতো, কিন্তু সেগুলোর প্রচ্ছদ শক্তভাবে বাঁধানো। বাইরে স্বস্তিকা এবং ঈগলসহ সিল রয়েছে। ভিতরে আছে হিটলারের গথিক লেখা যা দেখতে একেবারে মাকড়সার মতো (জড়ানো)।
স্টার্ন পত্রিকা ভেবেছিল, নাৎসি নেতা সম্পর্কে এর আগে যেসব তথ্য জানা গেছে, তা ওই ডায়েরির ভিত্তিতে একেবারে বদলে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, ইতিহাস নতুন ভাবে লেখার ক্ষমতাও রাখে ওই ডায়েরিগুলো।
পত্রিকার মতে ডায়েরির বিষয়বস্তু একেবারে ‘চক্ষু উন্মোচিত’ করার মতো, যা হিটলারের ‘স্বল্প পরিচিত’ সংবেদনশীল দিককে প্রকাশ করেছিল।
উদাহরণ স্বরূপ ডায়েরির পাতায় হিটলারের পেট ফাঁপা এবং হ্যালিটোসিসের (ব্যাড ব্রেথ বা মুখে গন্ধ) মতো সমস্যার সঙ্গে লড়াই করার মতো বিষয় থেকে শুরু করে অলিম্পিকের টিকিট পাওয়ার জন্য তার বান্ধবী ইভা ব্রাউনের চাপ দেওয়ার মতো ঘটনার উল্লেখ ছিল।
সেখানে উল্লেখ ছিল স্ট্যালিন – দ্য ওল্ড ফক্স (বুড়ো শিয়াল)-কে জন্মদিনে পাঠানো টেলিগ্রাম পাঠানোর বিষয়েও। কিছুটা আশ্চর্যজনকভাবে ওই ডায়েরিগুলোতে এমন ইঙ্গিতও ছিল, যা থেকে মনে হয় যে নাৎসি নেতা ‘তার নাম নিয়ে’ পরিচালিত ‘হলোকাস্ট’ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
স্টার্ন-এর সাংবাদিক গার্ড হাইডেম্যান এই জার্নালগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। নাৎসি স্মৃতিচিহ্ন সম্পর্কে তার বিশেষ ঝোঁক রয়েছে বলে প্রচলিত ছিল।
প্রসঙ্গত, এর আগে, ১৯৭৩ সালে ওই ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে তাকে একটা জরাজীর্ণ ইয়ট সম্পর্কে প্রতিবেদন লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এককালে ওই ইয়ট হিটলারের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হারমান গোরিং-এর ছিল। গার্ড হাইডেম্যান ওই ইয়ট কিনে সেটি ঠিকঠাক করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। এই সময় গোরিং-এর মেয়ে এডার সঙ্গেও তার একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তিনিই হাইডেম্যানকে বেশ কয়েকজন সাবেক নাৎসি নেতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। হাইডেম্যান দাবি করেন, এই যোগাযোগের সূত্র ধরে তিনি হিটলারের ওই ডায়েরিগুলোর সন্ধান পেয়েছিলেন।
সাংবাদিক হাইডেম্যানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই ডায়েরিগুলো বহনকারী বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পর সেগুলো থেকে উদ্ধার করে খড়ের গাদায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। মধ্যবর্তী সময়ে ওই জার্নালগুলো পূর্ব জার্মানস্থিত একজন সংগ্রাহকের কাছে এসে পৌঁছায়। পরে তিনি সেগুলো বিক্রি করার প্রস্তাব দেন।
ওই সংগ্রাহক এবং স্টার্নের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেন তিনি। ডায়েরিগুলো কেনার জন্য আলাপ-আলোচনা চালাতে থাকেন।
ওই ডায়েরির পাতা থেকে নাৎসি স্বৈরশাসক সম্পর্কে অজানা তথ্য বিশ্বের পাঠকের কাছে তুলে ধরার ‘প্রতিশ্রুতি’ ওই সাপ্তাহিক পত্রিকার কাছে ‘অপ্রতিরোধ্য’ আগ্রহ তৈরি করেছিল। বিষয়টা নিয়ে যাতে জানাজানি না হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক ছিল স্টার্ন কর্তৃপক্ষ।
হস্তলিপি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়, যাতে তারা হিটলারের লেখা ‘আসল’ নথির সঙ্গে ডায়েরির লেখা মিলিয়ে যাচাই করতে পারেন। কিন্তু তার জন্য ওই বিশেষজ্ঞদের ডায়েরির মাত্র কয়েকটা নির্বাচিত পৃষ্ঠাই দেখতে দেওয়া হয়েছিল।
স্টার্ন শেষ পর্যন্ত এই ডায়েরির সমস্ত খণ্ডের জন্য প্রায় ২৩ লাখ পাউন্ড ব্যয় করে এবং সেগুলোকে নিরাপদে রাখতে সুইস ভল্টে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্তও নেয়।
ডায়েরিগুলো যারা পরীক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথম ইতিহাসবিদ ছিলেন অধ্যাপক হিউ ট্রেভর-রোপার, যিনি গ্ল্যান্টনের লর্ড ডাক্রে নামেও পরিচিত।
তিনি ১৯৪৭ সালে ‘দ্য লাস্ট ডেজ অফ হিটলার’ শীর্ষক একটা বই লিখেছিলেন যা তাকে একাডেমিক দিক থেকে বিপুল সম্মান এনে দিয়েছিল। নাৎসি একনায়কের বিষয়ে তাকে একজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিবেচনা করা হতো।
তিনি ‘দ্য টাইমস’ সংবাদপত্রের একজন স্বাধীন পরিচালকও ছিলেন। এই সংবাদপত্র এবং ‘দ্য সানডে টাইমস’ রুপার্ট মারডক অধিগ্রহণ করেন।
লর্ড ডাক্রে প্রথমে ডায়েরিগুলি সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। সেগুলো যাচাই করে দেখার জন্য সুইজারল্যান্ডে যান তিনি।
ডায়েরিগুলো কোথা থেকে পাওয়া গিয়েছে সেই সংক্রান্ত কাহিনী শুনে মত বদল করতে শুরু করেন। তবে এই বিষয়ে তাকে একটা ‘ভ্রান্ত’ ধারণা দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল রাসায়নিক পরীক্ষা থেকে প্রমাণ হয়েছে যে ওই ডায়েরি ‘যুদ্ধের আগের’।
সেখানে বিপুল পরিমাণে লেখা তাকে প্রভাবিত করে।
‘দ্য টাইমস’-এর তৎকালীন সম্পাদক চার্লস ডগলাস-হোম ১৯৮৩ সালের ২২ এপ্রিল বিবিসিকে বলেছিলেন, হিউ ট্রেভর-রোপারকে যে বিষয়টা সবচেয়ে জোরালোভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং অবশ্যই একজন অ-বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমাকেও যা নাড়া দিয়েছিল, তাহলো বিপুল পরিমাণে উপস্থিত উপাদান (ডায়েরির সংখ্যা) এবং তার নিখুঁত ব্যাপকতা।
এই আর্কাইভের পরিসর ছিল বিশাল। হিটলারের লংহ্যান্ডে লেখা প্রায় ৬০টা খণ্ডের নোটবুক ছিল তাই নয়, হিটলারের আঁকা প্রায় ৩০০ ছবি এবং ব্যক্তিগত নথি যেমন তার পার্টি কার্ডও ছিল। আমার মনে আছে, সেখানে আর্ট স্কুলে ভর্তির আশায় তরুণ বয়সে তিনি যেসব ছবি সেই স্কুলে জমা দিয়েছিলেন সেটা ছিল। সেখানে পেইন্টিং ছিল, তৈলচিত্র এবং আরও অনেক কিছু ছিল। এখন একজন জালিয়াতকে এই বিপুল পরিমাণ জিনিস তৈরি করতে গেলে সত্যিই ততটাই দক্ষ হতে হবে।
লর্ড ডাক্রে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে এই জার্নালগুলো আসল।
এমনকি ‘দ্য টাইমসের’ জন্য এই জার্নালের সত্যতার পক্ষে একটা নিবন্ধও লিখেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে ওই ডায়েরিগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে পুনরায় মূল্যায়ন করা দরকার।
হিটলারের ডায়েরির বিষয়ে জানাজানি হওয়ামাত্রই সেগুলোর ‘সিরিয়ালাইজেশন’ (ক্রমিককরণ) অধিকার নিয়ে ‘বিডিং ওয়ার’ শুরু হয়ে যায়। ‘সানডে টাইমস’-এর স্বত্বাধিকারী মারডক এই নিয়ে চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য জুরিখের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
‘সিরিয়ালাইজেশন’ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টার্ন তড়িঘড়ি করে হিটলারের ডায়েরিগুলোর বিষয়ে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য একটা সংবাদ সম্মেলনের পরিকল্পনা করে।
তবে ডায়েরিগুলো উন্মোচনের আগেই, তা সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয়। এই তালিকায় অন্তত সানডে টাইমসের কর্মীরা ছিলেন, যাদের অনুরূপ ঘটনার কারণে আগেও ভুগতে হয়েছে।
এই ঘটনার আগে, মুসোলিনির লেখা ডায়েরির জন্য ১৯৬৮ সালে বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেছিল এই পত্রিকা। সেই ডায়েরির সত্যতার পক্ষে সায় দিয়েছিলেন খোদ মুসোলিনির ছেলে।
সানডে টাইমসের অনুসন্ধানী দলের হয়ে কাজ করা সাংবাদিক ফিলিপ নাইটলি ২০১১ সালে উইটনেস হিস্ট্রিকে বলেন, “কিন্তু সেগুলো ভুয়ো ছিল। মিলানের বাইরে ভার্সেলিতে বসবাসকারী দুই বৃদ্ধা নারী সেগুলো তৈরি করেন বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
‘প্রতারণা’ উন্মোচন
সানডে টাইমসের মালিক রুপার্ট মারডক ডায়েরির সত্যতা নিয়ে বেশ নিশ্চিত ছিলেন। সম্পাদক ফ্র্যাঙ্ক গাইলসের এই বিষয়ে ‘দ্বিধা’ থাকা সত্ত্বেও স্টার্নের সংবাদ সম্মেলনের আগের দিনই তিনি (মারডক) ‘ওয়ার্ল্ড এক্সক্লুসিভ’ শিরোনাম দিয়ে দ্য সানডে টাইমসে ওই প্রতিবেদন মুদ্রণের জন্য পাঠিয়ে দেন।
এদিকে, এই বিষয়ে আরও একবার আশ্বাস পেতে গাইলস ফোন করেন লর্ড ডাক্রেকে। এই সময় তিনি লর্ড ডাক্রেকে ফোন করেন কিন্তু ডায়েরিগুলো খাঁটি কি না সে সম্পর্কে তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে ‘১৮০ ডিগ্রি’ ঘুরে যান ওই ঐতিহাসিক।
এই প্রসঙ্গে ফিলিপ নাইটলি বলেন, এরপর কক্ষে উপস্থিত সংবাদপত্রের সকল নির্বাহীরা মাথায় হাত দিয়ে নিজেদের চেয়ারে বসে পড়েন। কারণ তারা তাদের প্রধান প্রমাণকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে ফেলেছেন। এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে প্রতিবেদন একেবারেই ভুল ছিল।
সানডে টাইমস তখনও প্রেস বন্ধ করে প্রথম পাতা বদলাতে পারত। কিন্তু গাইলস যখন পত্রিকার মালিককে ফোন করেন, তখন মারডক সিদ্ধান্ত বদলাতে রাজি হননি।
সেই সেদিনের ঘটনাবলী স্মরণ করে নাইটলি বলেন, মারডক বলেছিলেন, ডাক্রে এতদিন ধরে (এই বিষয়ে) দোদুল্যমান ছিলেন। আমরা (প্রতিবেদন) প্রকাশ করব।
স্টার্নের জন্য পরদিন, অর্থাৎ সংবাদ সম্মেলনের দিন পরিস্থিতি আরও বিরূপ হয়ে ওঠে ।
পত্রিকার প্রধান সম্পাদক পিটার কোচ ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ১০০% নিশ্চিত যে ডায়েরির প্রতিটা শব্দ হিটলার লিখেছিলেন।
কিন্তু লর্ড ডাক্রের স্বীকারোক্তি চিত্র বদলে দেয়। সেই ঐতিহাসিক যিনি এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ওই ডায়েরি আসল, প্রশ্নের মুখে পড়ে স্বীকার করেছেন যে (ডায়েরির সত্যতা নিয়ে) তিনি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
স্টার্ন এক্সিকিউটিভদের চেহারায় আতঙ্কের চাপ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন লর্ড ডাক্রে জানান যে তিনি বিমান দুর্ঘটনা এবং কথিত ডায়েরির মধ্যে কোনও যোগসূত্র স্থাপন করতে সক্ষম হননি এবং তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
তিনি বলেন, একজন ঐতিহাসিক হিসাবে আমি দুঃখ প্রকাশ করে বলতে চাই যে, ঐতিহাসিক নথিপত্র যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক পদ্ধতিগুলোকে হয়তো কিছুটা হলেও স্কুপের খাতিরে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
এর পরদিন, মার্কিন অটোগ্রাফ ডিলার চার্লস হ্যামিল্টন বিবিসি ব্রেকফাস্টকে বলেছিলেন ডায়েরির পাতাগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জালিয়াতির গন্ধ পান।
হ্যামিল্টন দাবি করেন, তিনি জানতেন যে ওই স্বাক্ষর খাঁটি নয় কারণ তাকে বারবার হিটলারের জাল নথি দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি তফাৎটা বোঝেন।
তিনি বলেন, অচিরেই কোনও প্রশ্ন এবং বিশেষজ্ঞদের প্যানেল ছাড়াই এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে যা বর্তমান সময়ে অপ্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি। পুরো ব্যাপারটাই খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে এবং এটা মানবজাতির ইতিহাসে একটা বড় ধাপ্পাবাজি হিসাবে থেকে যাবে।
তিনি ভুল ছিলেন না। দু’সপ্তাহের মধ্যে ফরেনসিক বিশ্লেষণে ডায়েরিগুলো জাল বা ভুয়া বলে ধরা পড়ে।
হ্যামিল্টন বিবিসিকে ঠিক যেমনটা উল্লেখ করেছিলেন যে হিটলারের স্বাক্ষরই শুধুমাত্র ভুয়া ছিল না আরও অনেক বিষয়ে গরমিল ছিল।
যেমন রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা যায় ডায়েরির কাগজ, আঠা এবং কালি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৈরি হয়। ডায়েরিগুলোতে একাধিক ভুল উল্লেখ, আধুনিক যুগের বাক্যাংশ এবং ঐতিহাসিক ভুলভ্রান্তি ছিল।
শুধু তাই নয় সেখানে কখনও কখনও এমন তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছিল যা হিটলার সম্ভবত জানতেন না।
বিষয়টা প্রমাণিত হওয়ার পর সানডে টাইমস দ্রুত এর সিরিয়ালাইজেশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদলায় এবং ক্ষমা প্রার্থনা মুদ্রণ করে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায় স্টার্ন পত্রিকা।
Leave a Reply