free tracking

নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিতে নতুন পদক্ষেপ!

নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে সাতটি নারী নেতৃত্বাধীন সংগঠন। নারী উন্নয়ন শক্তি আয়োজিত এক সভার মাধ্যমে সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে নারী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে পৃথকভাবে মোট ২০ দফা দাবি নির্ধারণ করেছে তারা।

নারী নেতৃত্বাধীন সাতটি সংগঠন হলো—এনইউএস, ইয়ং উইমেন ফর ডেভেলপমেন্ট রাইটস অ্যান্ড ক্লাইমেট (ওয়াইডব্লিউডিআরসি), বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএমএসএ), ফোরাম ফর কালচার এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (এফসিএইচডি), আভাস (এভিএস) এবং লাভ দাই নেইবার (এলটিএন)—মিলে এই দাবিগুলো উত্থাপন করে।

সংগঠনগুলো মনে করে, দেশিয় ও প্রবাসী নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা এবং শ্রমবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এটি শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, বরং একটি মানবাধিকার এবং রাষ্ট্রীয় সংকট। এ প্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের প্রতি তারা জরুরি ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সংগঠনগুলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যে কাছে ১০টি দাবি জানিয়েছে তা হলো- বিদেশগামী নারী কর্মীদের জন্য দেশ ছাড়ার আগে বাধ্যতামূলক ‘নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ’ চালু করা, প্রতিটি বাংলাদেশ দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইনসহ ‘নারী সহায়তা ডেস্ক’ চালু করা, যৌন নিপীড়নের শিকার নারী কর্মীদের দেশে ফেরার পর পুনর্বাসন, মানসিক ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে নারী শ্রমিক প্রেরণে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা, প্রবাসী নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে বেতন ও মর্যাদার সমতা নিশ্চিত করা, সহিংসতা গোপনে জানাতে ‘ডিজিটাল রিপোর্টিং অ্যাপ’ চালু করা, প্রতারক নিয়োগকারী এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর মনিটরিং ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, যৌন সহিংসতার শিকার নারী শ্রমিকদের জন্য পৃথক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, নারী কর্মীদের পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র ও যোগাযোগের মাধ্যম নিজেদের কাছে রাখার অধিকার নিশ্চিত করা, আইএলও কনভেনশন-এ সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতি পেশকৃত ১০টি দাবি হচ্ছে–প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ‘সেলফ গাইডলাইন’ প্রণয়ন এবং ‘কমপ্লেইন্ট কমিটি’ গঠন বাধ্যতামূলক করা, শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধনী ২০১৮ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, বেতন, প্রমোশন ও ছুটিতে নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করা, কর্মস্থলে সিসিটিভি, নারী নিরাপত্তা কর্মী ও হেল্পলাইন চালু করা, যৌন নিপীড়নের অভিযোগের পরিচয় গোপন রেখে দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা, নারীদের জন্য নিরাপদ বিশ্রাম কক্ষ, স্বাস্থ্যকর টয়লেট ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা, গার্মেন্টস ও কলকারখানায় ওয়েলফেয়ার অফিসার নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা, ৫০ বা ততোধিক নারী কর্মী থাকলে শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র চালু করা, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘নারী শ্রমিক সুরক্ষা ও প্রতিকার সেল’ গঠন ও নিয়মিত মনিটরিং, আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা।

সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একযোগে দাবি জানানো হয়েছে যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান স্বীকৃত হলেও বাস্তব কর্মপরিবেশে তারা নানা ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এজন্য এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে দৃশ্যমান পদক্ষেপ জরুরি।

প্রতিবাদী সংগঠনসমূহের মধ্যে বিওএমএসএ মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় একটি র‍্যালির আয়োজন করে যেখানে নারী উন্নয়ন শক্তি সহ অন্যান্য সংগঠন সমূহের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। র‍্যালির মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘নারী শ্রমিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় আমরা সরকারের কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *