free tracking

এবার হঠাৎ কেন লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে স্বর্ণের দাম, যা জানা গেলো!

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৩৬ দশমিক ৯৭ ডলারে। যা গত ১০ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৪০ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।

মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বাণিজ্য উত্তেজনা সাময়িকভাবে প্রশমিত হওয়ার খবর আসতেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত এই মূল্যবান ধাতুর প্রতি। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে স্বর্ণের দামে।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ৯০ দিনের জন্য নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্তই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদী মনোভাব সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ যেমন-স্টক ও বন্ডে আগ্রহ বেড়েছে, আর স্বর্ণের মতো ‘সেফ হ্যাভেন’-এর প্রতি আকর্ষণ কমেছে।

সিঙ্গাপুরের গোল্ড-সিলভার সেন্ট্রালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রায়ান ল্যান রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি বাজারের জন্য সুসংবাদ, তাই মানুষ এখন ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১০০ ডলার পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।‘

স্বাধীন ধাতু ব্যবসায়ী তাই ওং এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘মার্কিন-চীন শুল্ক হ্রাসের ফলে বিশ্ববাজারে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। এই স্বস্তির স্রোতই স্বর্ণের দামকে প্রযুক্তিগত স্তরের মাধ্যমে সংশোধনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের আগের অতিরিক্ত চাহিদা কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে, যার ফলে দামও সাময়িকভাবে নিচে নামছে।’

সিটি ইনডেক্স ও ফরেক্স ডট কমের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা মনে করেন, ‘যদিও দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের দামের প্রবণতা এখনো ঊর্ধ্বমুখী বা তেজি, তবুও সাম্প্রতিক মন্দার গতি যদি কয়েকদিন ধরে অব্যাহত থাকে, তবে এতে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। এখন যে অবস্থায় বাজার আছে, তাতে স্বর্ণের দাম প্রথমে ৩ হাজার ১৩৬ ডলারে নামতে পারে, তারপর ৩ হাজার ৭৩ এবং তার পর বড় মাইলফলক ৩ হাজার ডলার পর্যন্তও নেমে যেতে পারে।’

এদিকে, বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ভাষণ এবং অর্থনৈতিক সূচকের দিকে তাকিয়ে আছেন, এই ভাষণে সুদের হার বা অর্থনীতির সাম্প্রতিক চিত্র নিয়ে কিছু ইঙ্গিত মিলতে পারে। যার ভিত্তিতেই আগামী দিনগুলোর স্বর্ণের বাজারের দিক নির্ধারিত হতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, ফেড চলতি বছর ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদের হার কমাতে পারে। তবে আগে ধারণা করা হচ্ছিল, এই সিদ্ধান্ত জুলাই মাস থেকেই কার্যকর হতে পারে। এখন সেই প্রত্যাশা পিছিয়ে অক্টোবর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

মূলত সুদের হার কমলে তার একটি সরাসরি প্রভাব পড়ে স্বর্ণের দামের ওপর। ঐতিহ্যগতভাবে স্বর্ণ অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সুদের হার কম থাকলে স্বর্ণে বিনিয়োগ আরও লাভজনক হয়ে ওঠে, কারণ এটি সুদ না দিলেও তুলনামূলকভাবে তখন আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে, স্পট সিলভারের দাম ০.৭ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৩১ দশমিক ৯৮ ডলারে নেমে এসেছে। তবে ধাতুর বাজারে প্ল্যাটিনাম এবং প্যালাডিয়াম সামান্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। প্ল্যাটিনাম শূন্য ৫ শতাংশ বেড়ে ৯৮০ দশমিক ৩৫ ডলার ও প্যালাডিয়াম শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৯৫১ দশমিক ৯০ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *