free tracking

যেভাবে ৪০ রোহিঙ্গাকে আন্দামান সাগরে ফেলে দেয় ভারত!

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আবারও উঠেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ। দিল্লি থেকে আটক করে ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আন্দামান সাগরে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ সামনে এনেছে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম।

৮ মে সন্ধ্যায় দিল্লিতে থাকা এক তরুণ রোহিঙ্গা একটি ফোনকল পান মিয়ানমার থেকে। অন্যপ্রান্তে ছিলেন তার বাবা-মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা জানালেন— ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের, শুধু একটি লাইফ জ্যাকেট দিয়ে। এরপর সাঁতরে তারা পৌঁছান মিয়ানমারের উপকূলে, যেখানে এক জেলের ফোনে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা।

দুই দিন আগেই দিল্লি পুলিশ ৪১ জন রোহিঙ্গাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা সবাই জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR)-এর নথিভুক্ত ছিল এবং বৈধ পরিচয়পত্র ছিল তাদের কাছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বায়োমেট্রিক নেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে তাদের চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে, জোর করে বিমানবন্দরে আনা হয় এবং পোর্ট ব্লেয়ারে (আন্দামান) পাঠিয়ে একটি নৌজাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

সেখানে আবার মারধর করা হয়, এমনকি মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় যে তারা কাশ্মীরের পাহেলগাম হামলায় জড়িত এবং হিন্দুদের হত্যায় অংশ নিয়েছে—যার কোনো প্রমাণ নেই।

জাহাজে থাকার সময় বলা হয়, “তোমরা চাইলে ইন্দোনেশিয়া যেতে পারো, কিন্তু মিয়ানমারে ফিরতে হবে না।” কিন্তু বাস্তবে তাদের সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় লাইফ জ্যাকেট গায়ে। ভাগ্যক্রমে তারা মিয়ানমারের একটি এলাকায় উঠে পড়েন, যা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG) নিয়ন্ত্রিত।

NUG-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (PDF) এর হেফাজতে থাকা ৪০ জন রোহিঙ্গাকে নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

দিল্লিতে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে তাদের ফেরত আনার ও এই অবৈধ বিতাড়নের তদন্ত চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি থমাস অ্যান্ড্রুজ একে “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে মন্তব্য করেছেন এবং UN ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ জানিয়েছে, এই কাজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং ভারতের নিজস্ব আইন দুইটিরই লঙ্ঘন। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও ভারত তাদের জোরপূর্বক বিতাড়ন করেছে, যা মানবিকতার চরম অপমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *