free tracking

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সত্যি কি মানুষের উচ্চতা কমে?

একটু বয়স্ক মানুষের দিকে হঠাৎ তাকালে মনে হয় মানুষটি খাটো হয়ে গেছেন। অনেকে আবার বিশ্বাস করতে চান, মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ খাটো হয়ে যান। এটা কি পরিবর্তন নাকি কেবল দৃষ্টিভ্রম? বিজ্ঞান বলছে, বিষয়টি একেবারে বাস্তব এবং এর পেছনে রয়েছে একাধিক শারীরবৃত্তীয় কারণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত ৪০-৫০ বছর বয়সের পর মানুষের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, মেরুদণ্ডের ডিস্ক সংকোচন এবং হরমোনের তারতম্য। ১৯৯৯ সালের আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি’র একটি গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সের মধ্যে একজন পুরুষের গড়ে ১ দশমিক ২ ইঞ্চি এবং একজন নারীর প্রায় ২ ইঞ্চি উচ্চতা কমে যেতে পারে।

মেরুদণ্ডের সংকোচন যেভাবে উচ্চতা কমায়–

মানবদেহের মেরুদণ্ড ২৪টি আলাদা হাড় এবং তাদের মাঝখানে থাকা ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক দিয়ে গঠিত। ডিস্কগুলো তরল পদার্থ দিয়ে ভরা থাকে এবং এগুলোর কাজ হল ধাক্কা গ্রহণ করে নমনীয়তা প্রদান। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তরল পদার্থ শুকিয়ে যায় এবং ডিস্কগুলো চ্যাপ্টা হতে শুরু করে। এর ফলে মেরুদণ্ড সংকুচিত হয় এবং ধীরে ধীরে উচ্চতাও কমে যায়।

হাড়ের ঘনত্বের ভূমিকা–

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অস্টিওপেনিয়া বা অস্টিওপোরোসিস নামে এক অবস্থা তৈরি হয়। যার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। বিশেষ করে মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতির কারণে এই প্রক্রিয়া দ্রুত ঘটে। হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং সংকুচিত হতে শুরু করে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে উচ্চতার ওপর।

অন্যান্য কারণ

*অনেক সময় পিঠ বা কোমরের ব্যথা থাকলে মানুষ হাঁটতে গিয়ে খানিকটা ঝুঁকে পড়ে।
*বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পেশিও দুর্বল হতে থাকে, ফলে শরীর সোজা রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
*হাড়কে শক্তিশালী রাখার জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি উপাদান দুইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়।

প্রতিরোধের উপায় কী?

*নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
*ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার।
*মেরুদণ্ডের সঠিক ভঙ্গিমায় বসা ও হাঁটা।
*ওজন নিয়ন্ত্রণ।

অস্টিওপোরোসিস পরীক্ষার মাধ্যমে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া।
তবে, বয়স বাড়লে উচ্চতা কমে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তা একদম হঠাৎ করে হয় না। হাড় ও মেরুদণ্ডে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম এবং যত্নের মাধ্যমে এই পরিবর্তন কিছুটা রোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *