সম্প্রতি ‘অনুপমা রায় সুচি’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়, যেখানে নিজেকে ‘জুলাইযোদ্ধা’ দাবি করে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে। পোস্টে লেখা হয়, “আমি একজন জুলাই যো/দ্ধা হয়ে আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, সুযোগ পেলে আবার মাঠে নামবো শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য..! জুলাই আন্দোলন করাটা আমাদের সব থেকে বড় ভুল ছিলো।”
পোস্টটিতে আরও দাবি করা হয়, “কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ, হাসনাত, সারজিস, আসিফ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে আমাদের ব্যবহার করে। ইউনুস ৮ মাসে দেশের অংশ ভাড়া দেওয়া শুরু করেছে।”
এই পোস্টটি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও গাজীপুর ছাত্রলীগের নেতা নাসির মোড়লসহ কয়েকজন আওয়ামীপন্থী নেতা শেয়ার করেন, যা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন এক চিত্র। তাদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘অনুপমা রায় সুচি’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তৈরি করা হয়েছে।
অ্যাকাউন্টে পোস্টকৃত ছবিগুলো যাচাই করে দেখা যায়, সেগুলো মূলত ‘তিথি বিশ্বাস’ নামের একজন ভারতীয় নারীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া। সেই ছবিগুলো তিথি বিশ্বাস তার প্রোফাইলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে পোস্ট করেছিলেন।
অনুপমা অ্যাকাউন্টে যে কাভার ফটোটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও ২৬ এপ্রিল আপলোড করা হয়। অথচ একই ছবিটি তিথি বিশ্বাস তার ফেসবুকে ১৪ এপ্রিল আপলোড করেছিলেন, যেখানে কোয়েল বিশ্বাস এবং শিবানী মণ্ডল নামের আরও দুজনকে ট্যাগ করা ছিল।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উল্লেখ করা হয়, ব্যবহারকারী ‘পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয়, মাওনা, গাজীপুর’ থেকে পড়াশোনা করেছেন। পোস্টে গাজীপুরের কিছু ছাত্রলীগ নেতাকে ট্যাগ করে দেওয়া হয়, যা পোস্টটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সকল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রিউমর স্ক্যানার টিম নিশ্চিত করে, ‘অনুপমা রায় সুচি’ একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট, যার সব ছবি ও পরিচয় চুরি করা। উদ্দেশ্য—নিজেকে জুলাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া যেকোনো তথ্য যাচাই ছাড়া বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো এখন একটি পরিচিত কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Leave a Reply