free tracking

পদত্যাগ নিয়ে এবার নিজেই মুখ খুললেন প্রধান উপদেষ্টা!

সাক্ষাৎকারে নিক্কি এশিয়ার একটি প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন না বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি যে উত্তর দিলেন, তা ওই প্রশ্নের উত্তর ছিল না। প্রশ্নটি ছিল সম্প্রতি তার পদত্যাগ গুঞ্জন নিয়ে। তিনি পদত্যাগ করতে পারেন এমন আলোচনায় বাংলাদেশ ও এর বাইরে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হয় সম্প্রতি। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হয়েছে। এনসিপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গত সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জানান, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন। তার কাছে ড. ইউনূস কি এমন বার্তা দিয়েছিলেন? নিক্কি এশিয়ার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিইনি। যেহেতু বাংলাদেশে উত্তর দিইনি, তাই যদি জাপানে এসে উত্তর দিই তাতে আমার জন্য অনেক বেশি ঝামেলা তৈরি হবে।

ওই সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ সুতা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাবের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর শতকরা ৩৭ ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। সেখান থেকে সুতা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার প্রস্তাবও ব্যবহার করবেন বলে জানান।

বৃহস্পতিবার ফিউচার অব এশিয়া কনফারেন্সের এক ফাঁকে তার সাক্ষাৎকার নেয় পত্রিকাটি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিটি অংশীদার দেশের সঙ্গে তার দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এ কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের অধিক পণ্য কেনার প্রস্তাত গৃহীত হয় তাহলে অন্য দেশগুলো থেকে একই রকম পণ্য আমদানির পথ পরিবর্তন করতে পারে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে আমরা মধ্য এশিয়া থেকে, ভারতের কাছ থেকে এবং অন্য আরও দেশের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে সুতা কিনি। আমরা দেখছি, আমরা কেন এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিনি না। তাদের কাছ থেকে কিনলে তো বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে।

গত জুন পর্যন্ত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এসব আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের সুতা বা তুলা। গার্মেন্ট পোশাকের অন্যতম বৃহৎ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কাঁচামাল হিসেবে ৭.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সুতা বা তুলা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে কিছুটা আসে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো নিকটবর্তী মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে। ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে তার মধ্যে শতকরা ১২.৫ ভাগ সুতা বা তুলা। ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদনকারীরা আমাদের খুব ভাল বন্ধু। তারা ‘প্রশাসনে কিছু রাজনৈতিক সুযোগ’ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘কটন বেল্ট’ (রাজ্য) প্রতিনিধি পরিষদে ও সিনেটে তাদের সদস্য নির্বাচিত করে। সুতরাং তারা আমাদের সাপোর্টার।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি হিসেবে চাহিদার বেশিরভাগ তেল আমদানি করে। কিন্তু ড. ইউনূস বলেছেন, এই পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও কেনা যেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্ক কমানো নিয়ে আলোচনার সময়সূচি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। তবে জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা (পরিস্থিতিকে) হুমকি হিসেবে দেখছি না। আমরা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখছি। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিষয়টি বুধবার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড। তারা রায়ে বলেছে, বাণিজ্যকে রেগুলেট করতে কংগ্রেসকে কর্তৃত্ব দিয়েছে সংবিধান। আইণপ্রণয়নকারী শাখাকে অতিক্রম করতে পারেন না প্রেসিডেন্ট।

নিজের দেশের ইস্যুতে ড. ইউনূস নিক্কি’কে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে বাংলাদেশে শনাক্ত করে তা জব্দ করা হয়েছে। একবার যখন বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার এসব অর্থ ব্যবহারের সুযোগ পাবে তখন পরিকল্পনা আছে একটি সার্বভৌম সম্পদের তহবিল গঠনের। এই তহবিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যবহার করা হবে। দরিদ্রদের জীবন পরিবর্তনে ব্যবহার করা হবে এবং তরুণদের উদ্যোক্তা বানাতে সহায়তা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *