free tracking

বিবাহিত মেয়েদের বাবার ভিটার সম্পদ নির্ধারণে উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা!

বাবার ভিটা বা পৈত্রিক বসতভিটায় বিবাহিত মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও আলোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হওয়া এক ভিডিও বার্তায় অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ স্পষ্ট করেছেন এই সিদ্ধান্তের বাস্তবতা ও আইনগত ভিত্তি।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তার “লিগাল নলেজ” নামক ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, দেশের অনেক মানুষ মনে করেন যে মেয়েরা বাবার ভিটার সম্পত্তি পায় না বা পাওয়া উচিত নয়। তবে এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। ইসলামিক উত্তরাধিকার আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে ছেলে যা পাবে, মেয়ে পাবে তার অর্ধেক। অর্থাৎ, ভাইদের সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার থাকলে বোনেরও বৈধ অধিকার আছে।

তবে বসতভিটা বা বাসস্থান সম্পর্কিত বিশেষ কিছু আইনি ও সামাজিক বাস্তবতা রয়েছে। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিবাহিত মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করার কারণে এবং সমাজে বসতভিটা মূলত পুত্রদের জীবনযাপন ও উত্তরাধিকার নির্ভরতা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায়, উচ্চ আদালত এক পর্যবেক্ষণে বলেছে—বসতভিটার ক্ষেত্রে বিবাদ ও বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে বলে মেয়েদের অংশ প্রয়োগ সীমিত করা হয়েছে।

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, যদি কোনো বোনকে তার ভাইরা বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন এবং বাটোয়ারা মামলা করে তার প্রাপ্য অংশ আদায় করতে পারেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে কি না, তা বিবেচ্য নয়। বোনের মৃত্যুর পরও তার সন্তানরা সেই সম্পত্তির অংশীদার হিসেবে মামলা করতে পারেন।

উচ্চ আদালতের একাধিক রায় (যেমন: ১৩ ডিএলআর ২২৩ এবং ৩৪ ডিএলআর ২৪৫) অনুসারে, পৈত্রিক ভিটার বাটোয়ারা ক্ষেত্রে আদালত বিবাহিত কন্যাকে বসবাসকারী সদস্য হিসেবে বিবেচনা না করায়, ভিটার বাড়িতে তার দাবি সীমিত হতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে বোন সম্পূর্ণ বঞ্চিত হবেন। যদি ভাইয়েরা তাকে বিকল্প জমি বা অন্যত্র প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে না দেন, তাহলে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, পিতৃসূত্রে পাওয়া কোনো সম্পত্তির ক্ষেত্রে যদি উইল, হেবা বা দলিল থাকে, তাহলে মামলার আগে সেই কাগজপত্র যাচাই করে নিতে হবে। বাটোয়ারা মামলা করতে হলে খতিয়ান, নামজারি, দাগ নম্বর, দলিল, উত্তরাধিকার সনদসহ সব প্রমাণ উপস্থাপন করতে হয়।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বলেন, “অনেকেই ভুল মন্তব্য করেন। আইনের বিষয়ে মন্তব্য করতে হলে আইনি দলিল ও ব্যাখ্যা জেনে, বুঝে, পর্যালোচনা করে মন্তব্য করা উচিত। মেয়েদের অধিকার কেউ দিচ্ছে না—তারা নিজের অধিকার আইনগতভাবে আদায় করতে পারেন।”

আইনের সঠিক তথ্য জেনে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সচেতন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *