free tracking

বিবাহিত মেয়ের ওপর মা-বাবার হক!

কোরআন ও হাদিসে মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা ছেলে-মেয়ে সবার জন্য প্রযোজ্য। কেননা ‘সন্তান’ বলতে ‘ছেলে-মেয়ে’ উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। আর মা-বাবার জন্য সামর্থ্য অনুপাতে খরচ করা, তাঁদের খেদমত করা একপ্রকার ‘সদাচারণ’। সুতরাং মা-বাবা যদি এমন দরিদ্র হয় যে তাঁরা নিজের মালিকানার সম্পদে চলতে অক্ষম এবং অপরদিকে মেয়ে যদি সামর্থ্যবান ও বিত্তবান হয়, তাহলে তার ওপর মা-বাবার ভরণপোষণ ওয়াজিব। এক্ষেত্রে যদি তার সচ্ছল অন্য ভাইবোন থাকে তবে তাদের ওপরও ভরণপোষণ সমানভাবে ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত মা-বাবার খরচ না দিলে গুনাহগার হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫৬৪)

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমার রবআদেশ করেছেন যে তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদব্যবহার করো…।’ (সুরা ইসরা/বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কী তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্য,আত্মীয়-আপন জনের জন্য।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৫)

ইবন মুনজির (রহ.) বলেন, উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে সন্তান যদি সামর্থ্যবান হয় এবং মা-বাবা যদি গরিব হয় তাহলে তাঁদের জন্য খরচ করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব। (আল মুগনি ১১/৩৭৫)

আর যদি আর পিতামাতা সচ্ছল হয় কিংবা সন্তান-সন্ততি সামর্থ্যবান না হয় তাহলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণের খরচ চালিয়ে যাওয়া। (তাবঈনুল হাকায়েক ৩/৬৪, রদ্দুল মুহতার ২/৬৭৮)

দুই. সুতরাং মেয়ে/মেয়েদের প্রতি সংক্ষেপে ইসলামের নির্দেশ হলো—

১. সর্বাবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণ এবং তাঁদের যথাসাধ্য খেদমত করবে। তাঁদের খোঁজখবর নিবে। তাঁদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখবে। তাঁদের ইসলামী শরিয়তসম্মত আদেশ মেনে চলবে। যথাযথভাবে খেয়াল রাখবে তাঁরা যেন কষ্ট না পায়।
২. সামর্থ্যবান হলে নিজের মোহর থেকে অথবা নিজ মালিকানাধীন অন্য সম্পদ থেকে বাবা-মায়ের জন্য খরচ করবে।
৩. সামর্থ্যবান না হলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে এক্ষেত্রে মেয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পিতামাতাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে মেয়েরা ঘরোয়া পরিবেশে শিক্ষকতা করে বা কোন হস্তশিল্প (যেমন সেলাই এর কাজ) বা হাঁস-মুরগী পালন করে তাদের সহযোগিতা করতে পারে। স্বামীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ইসলামী শরিয়তের সীমায় বৈধ হয়—এমন যে কোন কর্ম সংস্থানে যোগ দিয়ে উপার্জন করতে পারে।
৪. সন্তান হিসেবে মেয়ে তার বাবা-মাকে জাকাত/সদকা দিতে পারবে না। তবে নিজ স্বামীকে মহব্বতের সঙ্গে শশুর/শাশুড়ির খেদমত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এমনকি তার জাকাত/সদকা থেকে হলেও। কিন্তু স্বামীর অগোচরে তার সম্পদ থেকে পিতামাতাকে কিছু দেওয়া জায়েজ হবে না। তবে স্বামীর সন্তুষ্টির সঙ্গে হলে কোনো সমস্যা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *