বাংলাদেশের প্রতিদিন ব্যবহার হওয়া টাকার নোট—২ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত—প্রায় সব নোটের নকশার পেছনে রয়েছেন এক নিভৃতচারী শিল্পী, মুছলিম মিয়া। যাঁর নাম অনেকেই জানেন না, কিন্তু তাঁর সৃষ্টির ছাপ প্রতিদিন ছুঁয়ে যাচ্ছেন কোটি মানুষ। রাজধানীর এক টং দোকানে বৃষ্টিবন্দি অবস্থায় নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। তখনই জানা যায়, তিনিই বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল নোট ডিজাইনার, এবং নতুন নোট নকশা প্রণয়ন কমিটির সদস্য।
মুছলিম মিয়ার শৈল্পিক যাত্রা শুরু হয় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ধুলদিয়া গ্রাম থেকে। শিশু বয়সে কয়লা, পাতা কিংবা দেয়ালে আঁকাআঁকির মাধ্যমে তার সৃজনশীলতার হাতেখড়ি হয়। ১৯৮৪ সালে মোহাম্মদপুরের গ্রাফিক আর্ট কলেজ (বর্তমানে চারুকলার একটি অংশ) থেকে ছাপচিত্র বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করলেও তাঁর লক্ষ্য ছিল আরও বড় কিছু।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এনগ্রেভার পদের জন্য আবেদন করেন। ভাইভায় পরীক্ষকের প্রতিকৃতি এঁকে সবাইকে মুগ্ধ করে চাকরি নিশ্চিত করেন। পরে ১৯৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, যেখানে ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক এনগ্রেভার তাঁকে ভবিষ্যৎ তারকা বলেও আখ্যা দেন।
তার উল্লেখযোগ্য ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে—
বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ১০ টাকার নোট (১৯৯৬)
জাতীয় সংসদ ভবনসহ ৫০ টাকার নোট
৫০০ টাকায় শহীদ মিনার
১,০০০ টাকায় স্মৃতিসৌধ
পলিমারভিত্তিক ১০ টাকার নোট, যা তিনি নিজেই বাসায় ডিজাইন করে সরকারের কোটি টাকা সাশ্রয় করেছিলেন
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ‘মই দেওয়া’ চিত্রকর্ম সংবলিত ৫০ টাকার নোটDSE stock quotes
২০১১ সালে একযোগে ২-১,০০০ টাকার ৯টি নতুন নোটের নকশা
২০২০ সালে বাংলাদেশ টাঁকশাল থেকে জেনারেল ম্যানেজার (প্রোডাকশন, ডিজাইন অ্যান্ড এনগ্রেভিং) হিসেবে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি ব্যক্তিগত স্টুডিওতে সময় দেন নিজের সৃষ্টিশীলতায়। তাঁর কাজের পরিধি দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি অদৃশ্য অথচ অমূল্য অধ্যায়।
মুছলিম মিয়া—নামটি হয়তো পোস্টারে নেই, সংবাদ শিরোনামে নেই, কিন্তু তাঁর সৃষ্ট শিল্প কাজ কোটি টাকার নোটে প্রতিদিন হাতবদল হয়; যা আমাদের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অনন্য প্রতীক।
Leave a Reply