free tracking

৫০ বছর বয়সে আপনার কত টাকা সঞ্চয় থাকা উচিত? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ঘুরে দাঁড়ানোর ৩টি কার্যকর উপায়!

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবসরজীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে অনেক আমেরিকান নাগরিকের মধ্যে। বিশেষ করে ৫০ পেরোনোর কাছাকাছি এসে সঞ্চয়ের হিসাব নিয়ে দুশ্চিন্তা যেন আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি মার্কিন আর্থিক পরিকল্পনা ও জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান ‘নর্থওয়েস্টার্ন মিউচুয়াল’-এর এক জরিপে দেখা গেছে, জেনারেশন এক্স শ্রেণিভুক্ত, অর্থাৎ ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নাগরিকদের অর্ধেকের বেশি মানুষই স্বীকার করেছেন যে, তারা এখন পর্যন্ত অবসরজীবনের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের সমপরিমাণ বার্ষিক আয় সমান টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় অবসর পরিকল্পনা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফিডেলিটি-র মতে, ৬৭ বছর বয়সে অবসর নিতে চাইলে ৫০ বছর বয়সে আপনার বার্ষিক আয়ের কমপক্ষে ছয় গুণ সঞ্চয় থাকা উচিত।

তবে সব বিশেষজ্ঞ এই হিসাবের সঙ্গে একমত নন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর আর্টেশিয়া ভিত্তিক আর্থিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাকসেস ওয়েলথ স্ট্র্যাটেজিস’-এর মালিক ও স্বীকৃত আর্থিক পরিকল্পনাকারী নাথান সেবেস্টা বলছেন, “অবসরজীবনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ‘ম্যাজিক নম্বর’ নেই।”

অবসর পরিকল্পনার হিসাব একেকজনের জন্য একেকরকম।সেবেস্টা মনে করেন, আপনি কত বছর অবসর জীবন কাটাবেন, কতটা ব্যয়বহুল জীবনযাপন করবেন এবং কখন অবসর নেবেন এই তিনটি বিষয় আপনার সঞ্চয়ের পরিমাণ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। যাঁরা দেরিতে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, খরচ কমিয়ে তুলনামূলক সহজ জীবনযাপনের কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য ফিডেলিটির নির্ধারিত ছয় গুণ সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা খুব বেশি হয়ে যেতে পারে।

এছাড়া, আপনি কোন অঙ্গরাজ্যে অবসর কাটাতে চান, তার উপর ভিত্তি করেও প্রয়োজনীয় সঞ্চয়ের পরিমাণে পার্থক্য হতে পারে প্রায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছে আর্থিক বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ‘জিও ব্যাংকিং রেটস’।

কীভাবে হিসাব করবেন?নাথান সেবেস্টা পরামর্শ দেন, উল্টো পথে পরিকল্পনা শুরু করতে। অর্থাৎ, আপনি প্রতি বছর কত টাকা আয় করতে চান তা ঠিক করুন, এরপর আপনি কত বছর আয় দরকার হবে তা নির্ধারণ করুন। সেই হিসাবে মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করে বার্ষিক সঞ্চয়ের পরিমাণ ও বিনিয়োগের বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করলে বোঝা যাবে আপনি কতটা পিছিয়ে রয়েছেন কিংবা এগিয়ে।

তবে যদি দেখা যায় আপনি সেভাবে প্রস্তুত নন, তাহলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সেবেস্টার পরামর্শ, “আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, সেখান থেকেই শুরু করুন। যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন, ততই লাভবান হবেন।”

পিছিয়ে থাকলে যা করবেন
১. সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধা নেওয়ার সময় পিছিয়ে দিন
যুক্তরাষ্ট্রে ৬২ বছর বয়স থেকে সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধা নেওয়া গেলেও, তাড়াতাড়ি শুরু করলে সুবিধার পরিমাণ চিরতরে কমে যাবে। সেবেস্টার মতে, যদি আপনি পুরোপুরি অবসর বয়স ৬৭-এর পর এই সুবিধা নেওয়া শুরু করেন, তাহলে প্রতিটি বছর দেরি করার জন্য সুবিধার পরিমাণ প্রায় ৮% করে বাড়তে পারে। অর্থাৎ ৭০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করলে, আপনি ৬৭ বছর বয়সে যে পরিমাণ পেতেন তার তুলনায় ২৪% বেশি পেতে পারেন।

২. ক্যাচ-আপ কন্ট্রিবিউশন সুবিধা ব্যবহার করুন
৫০ বছর বয়স পার হওয়ার পর, আইআরএস (Internal Revenue Service) আপনাকে ৪০১(কে) বা ৪০৩(বি)-এর মতো কর্মস্থলের অবসর পরিকল্পনায় অতিরিক্ত টাকা জমার সুযোগ দেয়। ২০২৫ সালের জন্য সাধারণত ২৩,৫০০ ডলারের সীমা থাকলেও, ৭,৫০০ ডলার বাড়তি যোগ করে মোট ৩১,০০০ ডলার পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে।

ব্যক্তিগত অবসর হিসাব (IRA)-এর ক্ষেত্রে ২০২৫ সালে আপনি ৭,০০০ ডলার পর্যন্ত জমা দিতে পারবেন, যার সঙ্গে অতিরিক্ত ১,০০০ ডলারের ক্যাচ-আপ কন্ট্রিবিউশন যুক্ত করা যাবে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য।

এই বাড়তি সঞ্চয় শুধু অবসর তহবিল বাড়ায় না, বরং করযোগ্য আয়ের পরিমাণও কমিয়ে দেয়, যা উচ্চ আয়ের বছরগুলোতে বেশ সহায়ক বলে মত দেন সেবেস্টা। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই সুযোগ সবসময় সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। এটি তখনই কাজে দেবে যখন আপনি প্রকৃত অর্থেই অতিরিক্ত সঞ্চয় করতে প্রস্তুত থাকবেন।”

৩. জীবনযাত্রার মান কিছুটা কমিয়ে ফেলুন
যদি দেখা যায় আপনি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়ে পিছিয়ে পড়েছেন এবং ঋণ শোধের চাপে রয়েছেন, তাহলে ভবিষ্যতের অবসরজীবনে জীবনযাত্রার মান কিছুটা কমিয়ে ফেলাই হতে পারে একমাত্র উপায়। সেবেস্টার মতে, “এমন অবস্থায় ১০-১৫ বছরের সময় থাকলে ঋণমুক্ত হওয়া এবং কম খরচে জীবন কাটানোর প্রস্তুতিই সবচেয়ে বেশি জরুরি।”

এর অর্থ হতে পারে খরচ কমানো, ছোট বাসস্থানে চলে যাওয়া কিংবা কম ব্যয়বহুল এলাকায় বসবাস শুরু করা। আর চূড়ান্ত বিকল্প হিসেবে অনেকেই অবসর বয়সেও কিছু কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। যদিও কেউ এমন অবসর জীবন কল্পনা করেন না, তবুও সেবেস্টার মতে, “যদি কেউ সময়ক্ষেপণ করেন এবং সঞ্চয় পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে এটি হয়তো তাদের জন্য বাস্তবসম্মত একমাত্র বিকল্প হতে পারে।”

অবসরজীবনের অর্থনৈতিক প্রস্তুতি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যার শুরু হওয়া উচিত যত দ্রুত সম্ভব। বয়স ৫০ পেরিয়ে গেলে অনেকেই ভাবেন সময় শেষ, তবে বাস্তবতা হলো যেখানেই থাকুন না কেন, সেখান থেকেই শুরু করলেই কিছু না কিছু অর্জন সম্ভব। আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময় ও পরিকল্পনার বিকল্প নেই।

আপনি যদি এখনই পরিকল্পনা শুরু করেন, তাহলে অবসরজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা সম্ভব সেটাই বলছে অভিজ্ঞতা ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বাস্তব পরামর্শ।

সূত্র:https://tinyurl.com/35fpu98w

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *