আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস অজান্তেই মস্তিষ্কের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের অভাব, মানসিক চাপ বা দ্রুত বার্ধক্য—এসব সমস্যার পেছনে দায়ী হতে পারে কিছু সাধারণ কিন্তু ক্ষতিকর আচরণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো নিয়মিত করলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে:
১. পর্যাপ্ত ঘুম না নেওয়া
ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য নয়—এটি মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে এবং স্মৃতি সংরক্ষণ করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে তা দীর্ঘমেয়াদে নিউরনের ক্ষতি করে।
২. অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আসক্তি
ঘন ঘন নোটিফিকেশন চেক করা ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করা মনোযোগ বিভ্রান্ত করে এবং “ডোপামিন হ্যাকিং”-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক আনন্দ অনুভব করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩. প্রসেসড ফুড ও অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ
প্যাকেটজাত খাবার ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে থাকা উপাদানগুলো স্নায়ুতন্ত্রে প্রদাহ তৈরি করে, যা স্নায়ুকোষ ধ্বংসে ভূমিকা রাখে।
৪. নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব
সতেজ রক্তপ্রবাহ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করেন না, তাদের স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা-শক্তি দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে।
৫. একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
মানুষ সামাজিক জীব। দীর্ঘ সময় একা থাকলে তা হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যা সরাসরি মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলে প্রভাব ফেলে।
৬. ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ
এই দুটি অভ্যাস নিউরনের গঠন ও কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। বিশেষ করে তরুণ বয়সে এগুলোর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।
৭. পানি কম খাওয়া
মস্তিষ্কের ৭৫% গঠিত হয় পানির দ্বারা। পানিশূন্যতা মনোযোগ ও স্মৃতি হ্রাস করে এবং ক্লান্তি বাড়ায়।
৮. নতুন কিছু না শেখা
নতুন ভাষা শেখা, বই পড়া বা কোনো সৃজনশীল কাজে যুক্ত না থাকলে মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং নিউরনের সংযোগ দুর্বল হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ:
প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন, এবং শরীরচর্চা মস্তিষ্ককে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে।
মস্তিষ্ক একটি পেশির মতো—যত বেশি সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন, তত বেশি শক্তিশালী হবে। আর অবহেলা করলে? সেটার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ।
Leave a Reply